বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বদলে গেল গাইবান্ধার ‘গলাকাটি’সহ ৯ শ্রুতিকটু স্কুলের নাম

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অর্থহীন নামগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকেনা। যার কারণে মানুষ সন্তানের খুঁজে খুঁজে  উজ্জ্বল-সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ নাম রাখেন। ইতিহাসে যে সব নাম উজ্জ্বল সে সব নাম রাখার চেষ্টা করেন। একই রকম বিদ্যালয়গুলোর নামের বেলাতেও।

শ্রুতিকটু হওয়ায় গাইবান্ধার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ২৪৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গত ৩ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে এ মন্ত্রণালয়। বদলে দেয়া ওই সব বিদ্যালয়ের মধ্যে গাইবান্ধার দুটি উপজেলার ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা-২০২৩ জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা-২০২৩ এর সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত। যা শিশুর রুচি, মনন, বোধ ও পরিশীলিতভাবে বেড়ে ওঠার বড় অন্তরায়।

তাই এ মন্ত্রণালয় এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সুন্দর, রুচিশীল, শ্রুতিমধুর এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী এ রকম নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত নাম পরিবর্তন করা হবে।

নীতিমালা-২০২৩ জারি করে বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিশুদের বুনিয়াদি শিক্ষা। শিশুদের শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপের সেই বুনিয়াদি শিক্ষাঙ্গনের নাম যখন হয় ‘গলাকাটি’ ‘ধুতিচোরা’, ‘পাগলার চর’ এর মতো নাম, তখন সাভাবিকভাবে নানা ভাবে ট্রলের শিকার হয় ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা। যেখানে শিক্ষা জীবনের প্রথম সিঁড়িতেই শিশুদের মনে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

‘শুধু কি তাই? ঠাট্টার ছলেও মানুষ কিংবা ছোট্ট শিশুদের অনেক সময় বতে শোনা যায়, “গলাকাটি স্কুলে পড়ি, শালা গলা কেটে দেব”। এছাড়া পাগলার চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী পাগল ছাড়া আর কী হবে? "ধুতিচোরা স্কুলের ছাত্র/ছাত্রী চোর ছাড়া আর কী হবে? বলে উচ্চারণ করতে দ্বিধা করেনা অনেকে। ফলে অনেক শিশু লজ্জা পেয়ে এসব বিদ্যালয়ে অনেক সময় আসতে চায় না। অথচ বিভিন্ন সময়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করণ করা হয়েছে।’

ওই সব বিদ্যালয়ের নেতিবাচক নামের ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সচেতনমহলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্রুতিকটু শোনায় এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তন করা হোক। অবশেষে এমন একটি দায়িত্বশীল যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক অর্থ দাঁড়ায় এমন ধরনের দেশের ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, প্রথম পর্যায়ে ৩০ টি জেলায় শ্রুতিকটু নাম পরিবর্তন করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৪৮টি। যার মধ্যে গাইবান্ধার রয়েছে ৯টি। এ জেলার সদর উপজেলার চারটি এবং ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচটিসহ মোট ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

নাম পরিবর্তন হওয়া ফুলছড়ি উপজেলার বিদ্যালয়গুলো হলো- ফুলছড়ি উপজেলার ‘গলাকাটি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টে হচ্ছে ‘আনন্দ বাজার’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘পাগলার চর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘ভোরের পাখি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘নাপিতের হাট’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘থানাপাড়া আদর্শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘বাজে ফুলছড়ি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘চর ফুলছড়ি’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ‘কঞ্চিপাড়া ১ নং’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর নাম পাল্টে হচ্ছে ‘কঞ্চিপাড়া আদর্শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এছাড়াও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ‘পঁচারকুড়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টে হচ্ছে ‘গিদারী কৃষ্ণচূড়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘বাজে চিথুলিয়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘পশ্চিম চিথুলিয়া’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ‘ধুতিচোরা’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে ‘রহমাননগর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ‘পূর্ব ধুতিচোরা’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টে নতুন নাম হচ্ছে ‘গিদারী আনন্দনগর’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

তুলনামূলক এসব পুরাতন এবং পরিবর্তিত নাম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ধুতি শব্দটি সংস্কৃত ধৌতি শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ শুদ্ধ করা বা ধৌত করা। যার মাধ্যমে প্রতিদিনের পরিধান করা পরিষ্কার পোশাককে বোঝায়। যা প্রাচীনকালে অন্তরিয়া পরিধেয় বর্তমানে বিবর্তিত হয়ে ধুতির আকার নিয়েছে। ধুতি এখন হিন্দু ধর্মীয় পুরুষদের পরিধান বস্ত্র হিসেবেই পরিচিত।

আর চোরা শব্দটির অর্থ হলো চোর অর্থাৎ যে চুরি করে। সে হিসেবে ধুতিচোরা শব্দের অর্থ যে ধুতি চুরি করেছে বা ধুতি চোর। যা অত্যন্ত শ্রুতিকটু এবং নেতিবাচক শব্দ। তাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয়টির নাম বদলে করেছে রহমাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা প্রসিদ্ধ ও অর্থবহ একটি নাম।

একইভাবে পাগলার চর বলতে বোঝায় পাগলের চর। যে বিদ্যালয়টির নাম পাল্টে দেয়া হয়েছে ভোরের পাখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর উপাধি। এছাড়াও সর্বক্ষেত্রে ভোরের পাখি নামটি ইতিবাচক এবং শ্রুতিমধুর নাম হিসেবে প্রকাশ পাবে। এছাড়াও নতুন করে ওই বিদ্যালয় এ নাম ধারণ করায় শিশুদের মনে একটি ইতিবাচক ধারণার জন্মদিবে। একই সঙ্গে তারা পুলকিত হবে- এমনটাই প্রত্যাশা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা বোরহানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাদী হাবিবা সুলতানা বলেন, ‘এমন কিছু বিদ্যালয়ের নাম আছে যেসব নাম উচ্চারণ করতে মুখে বাধে। প্রতিনিয়ত শিশুরা ওইসব নাম নিয়ে ঠাট্টার শিকার হন। সারা দেশের শ্রুতিকটু নামের বিদ্যালয়গুলো চিহ্নিত করে নামগুলো পরিবর্তন জরুরি। ওই সব নেতিবাচক নাম পরিবর্তন করে অর্থপূর্ণ নাম রাখা হলে নরম মনের কোমলমতি শিশুরা তাদের বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে লজ্জা না পেয়ে গর্ব করতে পারবে।’

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলাল হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পাল্টানো হয়েছে। পাল্টে যাওয়া নামগুলো ছিল শ্রবণকটু। যা শিশুদের মনে খারাপ প্রভাব ফেলত।’

তিনি আরও বলেন, ‘রমজান এবং ঈদের ছুটি শেষ হয়ে বিদ্যালয় খুললে নাম পাল্টে যাওয়া বিদ্যালয়গুলোর সাইনবোর্ডে নাম পাল্টে দেয়া হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে সকল পেপারসে নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অর্থহীন নামগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকেনা। যার কারণে মানুষ সন্তানের খুঁজে খুঁজে উজ্জ্বল-সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ নাম রাখেন। ইতিহাসে যে সব নাম উজ্জ্বল সে সব নাম রাখার চেষ্টা করেন। একই রকম বিদ্যালয়গুলোর নামের বেলাতেও।

‘তবে যেকোনো কারণে হোক সারা দেশেই স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনের মাধ্যমে কিছু বিদ্যালয়ের বা শ্রুতিকটু নাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ওইসব নাম পরিবর্তনের উদ্যোগটি একটি ভাল দিক।’

শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি মনে করি পরিবর্তন করা এসব অর্থপূর্ণ, শ্রুতিমধুর এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ এসব নাম কোমলমতি শিশুদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে শিশুরা গর্বের সঙ্গে তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উচ্চারণ করবে।’

গাইবান্ধায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৪৬৬ টি। এসব বিদ্যালয়ের বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা ৮ হাজার ২১৩ জন এবং এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৭৩ জন।

এ বিভাগের আরো খবর