নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে নওগাঁর সড়কে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে এক স্কুলছাত্রী।
শহরের তাজের মোড় ও ব্রিজের মোড় সড়কে রোববার সকালে ঘণ্টাব্যাপী চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান করে ওই শিক্ষার্থী।
ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া নামের ওই শিক্ষার্থী নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।
সড়কে অবস্থানের সময় ছোঁয়ার হাতে থাকা পোস্টারে লেখা ছিল, ‘সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই’। এ সময় স্থানীয় পথচারীরা তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
পথচারী জুলফিকার রহমার বলেন, ‘আমরা আসলে সড়কে কেউ নিরাপদ নয়। বাসা থেকে বের হলে সুস্থভাবে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারবো কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নাই।
‘একজন ছোট শিশু শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবার উচিত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হওয়া।’
আরেক পথচারীর ভাষ্য, ‘তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা বাচ্চাটির এমন প্রতিবাদ ও দাবি খুবই যৌক্তিক। আমরা তার দাবিকে সমর্থন করছি। তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে।
‘প্রতিদিনই সড়কে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে।’
কী উপলব্ধি থেকে এবং কেন রাস্তায় দাঁড়াল, সে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা বলে, ‘টিভি -পত্রিকাতে প্রতিদিন দেখি মৃত্যুর খবর। তার অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। রাস্তায় বের হলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারব কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয় লাগে।’
ফাতেমা আরও বলে, ‘বেশ কয়েক দিন আগে নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এক বাবা-মা। আর বেঁচে যায় তাদের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু। এখন ভাবুন সেই শিশুটির কী হবে?
‘শিশুটি বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল সারা জীবনের জন্য। আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সংগীতশিল্পী খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় গত ১৮ এপ্রিল জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিল।
‘এর আগে ১৭ এপ্রিল নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পতি। আর বেঁচে যায় তাদের পাঁচ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এ ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটে যায়। মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না।’
শিশুটির বাবা বলেন,“ফাতেমা আমাকে বলেছে, ‘আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই।’’’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি, যার কারণে পুরো সমর্থন জানিয়েছি। আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করছে, ঠিক সেভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবিগুলো তুলে ধরত, তবে প্রতিদিন এমন প্রাণহানির মতো ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আসত।
‘আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই। আর তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, যানবাহন চালক ও মালিকদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থী ফাতেমার এমন উদ্যোগ আমাদের অনেক মুগ্ধ করেছে। এমন দাবি ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মাঝে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তার এমন উদ্যোগ ও দাবিকে সাধুবাদ জানাই।’