দেশের নানা প্রান্তে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ, যার ফলে গরমে অতিষ্ঠ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। তীব্র দাবদাহের মধ্যে শনিবার হিট স্ট্রোকে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এমন বাস্তবতায় গা ঝলসানো গরম থেকে মুক্তি কবে মিলবে, তা জানার আগ্রহ অনেকের।
দেশের মানুষ কবে দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে, তা নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী এক আবহাওয়াবিদ রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) কিন্তু রংপুর বিভাগে কোনো হিটওয়েভ (দাবদাহ) ছিল না, তবে আজকে রংপুর বিভাগের টেম্পারেচারটা (তাপমাত্রা) বাড়বে এবং এটা মৃদু হিটওয়েভ হবে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। এ ছাড়া দেশের যে অবস্থাটা আছে তাপপ্রবাহের, এটা দুই-এক জায়গায় বাড়বে। তা ছাড়া মোটামুটি গতকালকের মতো একই অবস্থা থাকবে।
‘আগামীকাল-পরশু এই দুই দিনও আশা করছি আমরা একই মতো থাকবে; নিয়ারলি আনচেঞ্জড (প্রায় অপরিবর্তিত) যেটা বলি আমরা। (এপ্রিলের) ২৪/২৫ তারিখে একটু কমার সম্ভাবনা আছে, তবে তার মানে এই না যে, তাপপ্রবাহ শেষ হয়ে যাবে। সেটা হয়তো মাঝারি থেকে মৃদুতে আসতে পারে বা দুই-এক জায়গা থেকে কমতে পারে তাপপ্রবাহের হারটা, কিন্তু দেশের বেশির ভাগ জায়গায় তাপপ্রবাহটা এই মাসজুড়েই বিরাজমান থাকবে।’
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে।
মে মাসে দাবদাহ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, সে বিষয়ে সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘আসলে আমাদের যে ভৌগোলিক অবস্থান, প্লাস আমাদের যে ক্লাইমেটোলজি (জলবায়ু পরিস্থিতি অর্থে), এই প্রেক্ষিতে এপ্রিল এবং মে মাস হচ্ছে সবচেয়ে উষ্ণতম দুটি মাস। অতীতের যে ক্লাইমেটোলজি বা রিপোর্টগুলো আছে, তাতে দেখা গেছে যে, কখনও কখনও এপ্রিলের থেকে মে মাসেই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল। তো আমরা সে ক্ষেত্রে আশঙ্কা করতে পারি যে, এপ্রিলের পাশাপাশি মে মাসেও হিটওয়েভটা থাকবে।
‘মে মাস যেহেতু আমাদের মনসুনের (বর্ষাকাল) কাছাকাছি, এর পরেই জুন মাস। জুন মাস থেকেই আমাদের মনসুনটা মোটামুটি অনসেট শুরু হয়। তো সে ক্ষেত্রে জুন মাসে কিছু ময়েশ্চার (বাতাসে আর্দ্রতা) আসতে শুরু করবে। কখনও কখনও দেখা যাবে যে বৃষ্টি, আবার হিটওয়েভ। ময়েশ্চার আসার কারণে গরমের অস্বস্তিটাও বাড়বে, আবার একটু কমবে, তবে হিটওয়েভ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যে স্পেলটা আমাদের এপ্রিল মাসে আছে, হয়তো এটার মতো না, তবে তাপপ্রবাহ থাকবে। এপ্রিল ও মে উভয় মাসেরই হিটওয়েভ থাকবে, তবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে একটু কম থাকার সম্ভাবনা আছে।’
জুন থেকে দাবদাহ একেবারে চলে যাবে কি না, সে বিষয়ে জেবুন্নেসা বলেন, ‘জুনে যে একেবারে থাকবে না, তা নয়। গত বছর জুন মাসেও বেশ কিছু স্বল্প পরিসরে, ছোট ছোট স্কেলে দুই-তিন দিনের স্পেলে কিছু তাপপ্রবাহ ছিল। যদিও গত বছর সারা বিশ্বে এল নিনো অ্যাকটিভ ছিল। এই বছরটাতে এল নিনো আমরা আশা করছি জুন থেকে কমে যাবে। এল নিনো থেকে নিউট্রাল কন্ডিশন বা লা নিনা পর্যায়ে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে একটু কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘হয়তো ছোট স্পেলে এক দিন, দুই দিন, এ রকম একটু থাকতে পারে, তবে আমরা আশা করছি আসলে মের মাঝামাঝি থেকেই একটু তাপপ্রবাহটা কমে যাবে।’
প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণায়ন বা তাপমাত্রা গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়াকে এল নিনো বলে।