বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্ষমতাধর কেসিসি কাউন্সিলরের কাছে অসহায় রেলওয়ে

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১৮:১৩

স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ শেখ বলেন, ‘খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি রয়েছে। রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জায়গা যখন ভরাট করা হয় তখন কাউন্সিলর মুন্না কেসিসির প্যানেল মেয়র ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে জমি ভরাট করলেও তাকে বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’

রেলওয়ের ৬৬ শতক জলাশয় ভরাট করে দখলে রেখেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এক্ষেত্রে তিনি অজুহাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন খুলনা সিটি করপোরেশনকে (কেসিসি)। তার দাবি, মেয়র ওই জায়গায় পার্ক বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই পুলিশে অভিযোগ দিয়েও সেই সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারছে না রেলওয়ে।

তবে কেসিসি থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে কোনো নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়নি। আর কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কিছুই জানেন না মেয়র।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি রয়েছে। কয়েক বছর আগে স্থানীয় জনি মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে ওই জমি ইজারা দেয়া হয়েছিল। ওই জমিটুকু জলাশয় হওয়ায় ইজারার শর্তে উল্লেখ ছিল যে তা ভরাট করা যাবে না। তবে ইজারা নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই জায়গাটি ভরাট করে ফেলা হয়।

রেলওয়ের যশোর ও খুলনার ভূমি কর্মকর্তা মহসিন আলী বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশে ওই জমি ভরাট করা হয়েছে। জনি মিয়ার দায়িত্ব ছিল ওই জলাভূমি রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের। কিন্তু তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নার সঙ্গে যোগসাজস করে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ফেলেছেন।’

শর্ত ভঙ্গ করে ভূমি ভরাট করায় জনি মিয়ার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর সরকারি রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ভূমি কর্মকর্তা। তবে প্রভাবশালী কাউন্সিলরের চাপে পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।

মহসিন আলী বলেন, ‘তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জিআরপি থানায় যে ডায়েরি করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। ওই সময়ে কাউন্সিলর মুন্না ও তার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে ওই তদন্ত বন্ধ করে দেন। অবশেষে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমির পুরো জলাশয়টি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যায়।’

সম্প্রতি রেলওয়ের ওই সম্পত্তি পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেখানে দেখা যায়, জলাশয়টির কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো জায়গাটি সমতল মাঠে পরিণত হয়েছে। আর কিছু শ্রমিক ভরে ফেলা জায়গাটি সমতল করছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রেলওয়ের ওই জমিতে শিশুপার্ক, কাউন্সিলর কার্যালয়, দোকানপাট ও বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ শেখ বলেন, ‘রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জায়গা যখন ভরাট করা হয় তখন কাউন্সিলর মুন্না কেসিসির প্যানেল মেয়র ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে জমি ভরাট করলেও তাকে বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি রেলওয়ের কর্মকর্তারা এখানে এসে অসহায় বোধ করেন। মুন্না স্পষ্ট করেই তাদেরকে বলে দেন- এটি কেসিসির মালিকানাধীন পরিত্যক্ত জমি এবং তারা শিশুদের জন্য একটি পার্কসহ সেখানে কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। তখন রেলওয়ের কর্মকর্তারা পুলিশের সহায়তা নেন।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খুলনার জিআরপি থানার ওসি ইদ্রিস আলী মৃধার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর দাবি করেন যে ড্রেন সংস্কারের সময় জমে থাকা মাটি ফেলার জায়গা নেই, তাই কেসিসি মেয়রের নির্দেশে তারা মাটি দিয়ে জলাশয়টি ভরাট করছেন।’

যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নাও দাবি করেন, কেসিসি মেয়রকে জানানোর পর তিনি জলাশয়টি ভরাট করেছেন।

তিনি বলেন,’ জলাশয়টি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। আর তা স্থানীয়দের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই আমি মেয়রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি এবং জনগণের স্বার্থে জলাশয়টি ভরাট করে দিয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে সেখানে একটি শিশুপার্ক নির্মাণ করা হবে।

অনুমতি ছাড়া রেলওয়ের সম্পত্তি জলাশয় ভরাট করা আইনসঙ্গত কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘ওই জমিতে সিটি করপোরেশনের পার্ক স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আর জমি ভরাট ও দখলের ব্যাপারে মেয়র কোনো কিছুই জানেন না।’

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল। তিনি বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জলাশয় দখল করে নিলেন। আর জমির মালিক সরকারি প্রতিষ্ঠান পুলিশের আশ্রয় নিয়েও তা রক্ষা করতে পারলো না। এখানে আইন অন্ধ দৃষ্টির ভূমিকা রেখেছে।’

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূমি সম্পত্তি কর্মকর্তা (পাকশী জোন) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা জলাশয়টি ভরাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে জায়গাটির চারপাশে বেড়া দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর