ফেনীর ছাগলনাইয়ায় এক নারীকে গাছে বেঁধে রেখে তার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার বাথানিয়া গ্রামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
প্রাণ হারানো তরুণের নাম নুর মোহাম্মদ, যার বয়স ১৮ বছর।
পরিবারের অভিযোগ, গত শনিবার বিকেলে টাকা চুরির অভিযোগে নুর মোহাম্মদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার মাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
এ ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নুর মোহাম্মদ নোয়াখালীর সুধারাম থানার আন্দারচর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। তিনি ছাগলনাইয়া উপজেলার বাথানিয়া গ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা মঈন উদ্দিনের বাড়িতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন।
তরুণকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মঈন উদ্দিন ছাগলনাইয়ার বাথানিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
নুর মোহাম্মদের মা বিবি খতিজা জানান, অভাবের কারণে চার বছর আগে নুর মোহাম্মদকে মঈন উদ্দিনের বাড়িতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজে দিয়ে যান তিনি। তার মাসিক বেতন ধরা হয়েছিল দুই হাজার টাকা। গত চার বছরে তাকে ব্যাংক কর্মকর্তা কখনও ছুটি দেননি। এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথাও বলতে দিতেন না। সেই ক্ষোভ থেকে গত ২৭ রমজান ব্যাংক কর্মকর্তার বাসা থেকে ৮০ হাজার টাকা ভর্তি একটি খাম চুরি করে নিয়ে নুর মোহাম্মদ নোয়াখালীর বাড়ি চলে যান।
বিবি খতিজা আরও জানান, বাড়ি আসার পর থেকে মোবাইল ফোনে মঈন উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা তাদের হুমকি দিতে থাকেন। তাদের অব্যাহত হুমকিতে ঈদের পরের দিন (শুক্রবার) তিনি নিজে ছেলেকে নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে যান এবং চুরি করে নেয়া টাকা ফেরত দেন।
নুর মোহাম্মদের মা অভিযোগ করেন, বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মঈন উদ্দিনের চার ভাই মিলে তার ছেলেকে পেটাতে শুরু করেন। বাধা দিলে তারা তাকেও (খাতিজা) মারধর করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। শুক্রবার সারা রাত দফায় দফায় তার ছেলেকে পিটুনি দেয়ার পর শনিবারও মারধর করেন। বিকেলে মৃত্যু হয় নুর মোহাম্মদের।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের যদি অন্যায় থাকে, তাহলে তারা তাকে পুলিশে দিত। আমি তাদের কাছে আমার ছেলের জীবন ভিক্ষা চেয়েছি, তবু তাদের মন গলেনি। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’
এ ঘটনায় রোববার বিকেলে বিবি খতিজা ব্যাংক কর্মকর্তা মঈন উদ্দিনসহ সাতজনের নামে ছাগলনাইয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি হাসান ইমাম বলেন, ‘ওই দিন রাতে খবর পেয়ে পুলিশ ওই ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়ি থেকে নুর মোহাম্মদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।’
ওসি বলেন, ‘নিহত নুর মোহাম্মদের পিঠ, কোমর, হাত, পাসহ পুরো শরীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতে নুর মোহাম্মদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারপরও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
‘গতকাল (রোববার) বিকেলে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নুর মোহাম্মদকে হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা মঈন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মঈদ উদ্দিন নুর মোহাম্মদকে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন।
‘ঘটনার পর থেকে ওই মামলার অপর আসামিরা পলাতক। তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।’
নুর মোহাম্মদকে পিটিয়ে হত্যা এবং তার মাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মঈদ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।