সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ আগামী ১৯ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পৌঁছাতে পারে। এর পরের দিন ২০ এপ্রিল জাহাজটির মুক্ত ক্রুরা বিমানে করে ফিরতে পারেন বাংলাদেশে।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে রোববার এমভি আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘জিম্মি নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে অভিযান চালানোর পরিকল্পনাকেও নিরুৎসাহিত করা হয়।’
ডিএমডি বলেন, ‘আমাদের জাহাজ হাই রিস্ক এরিয়ার (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা) বাইরে ছিল। ২০০ নটিক্যাল মাইল রিস্কি। আমরা ৬০০ নাটিক্যাল মাইলে ছিলাম। তাই আর্ম গার্ড নিইনি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিদেশি যুদ্ধজাহাজ ফোর্সফুলি (বল প্রয়োগ করে) জাহাজটি উদ্ধারে যেতে চেয়েছিল। আমাদের সরকার কুইক রেসপন্স করেছে। সাংবাদিকরা সহযোগিতা করেছেন।’
কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, ‘জাহান মণির (জাহাজ) সময় আমাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। তখন উদ্ধারে সময় বেশি লেগেছিল। এবার জাহাজ দখলে নেয়ার পর আমরা জাহাজের লোকেশন ট্র্যাক (অবস্থান শনাক্ত) করতে থাকি। যোগাযোগ শুরুর পর প্রতিদিনই কথা হচ্ছিল। নাবিকরা কেমন আছে, কত তাড়াতাড়ি দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে যাবে ইত্যাদি কথা হতো।
‘দুই দিন আগে আমাদের দাবি ছিল। তাই প্রত্যেক নাবিকের ভিডিও নিয়েছি। মুক্তিপণের প্রতিটি কাজ আইনগতভাবে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে৷ কত ডলার সে বিষয়টি আমরা নানা কারণে বলতে পারছি না। ইউএসএ, ইউকে, সোমালিয়া, কেনিয়ার নিয়ম মানতে হয়েছে।’
জাহাজের ক্রুদের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ (রোববার) ভোর তিনটায় কথা হয় ক্যাপ্টেনের সঙ্গে। জলদস্যুরা ৬৫ জন ছিল। বোটে করে তারা চলে যায়। নাবিকদের অপশন আছে ফ্লাইটে আসা কিংবা জাহাজে আসা।
‘জাহান মণি ১০০ দিন ছিল। নাবিকদের ভিসা সমস্যা ছিল। আবদুল্লাহ জাহাজটি দুবাই থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসব।’
ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান বলেন, ‘মালিকপক্ষ বা আমরা সরাসরি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। যারা এটি নিয়ে কাজ করেন, তাদের সাহায্য নিয়েছি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহাজসহ নাবিকদের উদ্ধার করা গেছে।’
ক্রুরা কবে দেশে পৌঁছাতে পারেন, তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৯ এপ্রিল দুবাই পৌঁছাতে পারে জাহাজটি। তারপর ২০ এপ্রিল এয়ারে করে সরাসরি চট্টগ্রামে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে নাবিকদের।’
জাহাজের নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়েও উত্তর দেন শাহরিয়ার জাহান রাহাত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জাহাজটি নিরাপদ দূরত্ব দিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে গত এক দশকে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ৯০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে জাহাজটি চলাচল করছিল। সে জন্য জাহাজে গানম্যান ছিল না, তবে এবার থেকে আমরা আরও সতর্ক অবস্থায় জাহাজ পরিচালনা করব।’
সোমালিয়ার উপকূলে জাহাজটি যাওয়ার পরপরই জলদস্যুদের একজন কমান্ডার যোগাযোগ করেছেন উল্লেখ করে মেহেরুল করিম বলেন, ‘একজন কমান্ডার যিনি ইংরেজি বলতে পারেন, তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর থেকে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাহাজের নাবিকেরা সুস্থ আছেন কি না, তা নিশ্চিত করা।
‘আমরা যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল শিপিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তাই প্রতিটি রুল আমাদের মেনে চলতে হয়। এমভি আবদুল্লাহর বেলায়ও বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রতিদিন জুমে কথা বলে আপডেটগুলো জানাতে হতো। ডলারভর্তি ব্যাগ পাওয়ার ৮ ঘণ্টা পর এমভি আবদুল্লাহকে মুক্তি দেয় দস্যুরা।’
এমভি আবদুল্লাহর ক্রুরা কেমন আছে, তার একটি ভিডিও প্রতিদিন নিতেন জানিয়ে মেহেরুল করিম বলেন, ‘আমরা জানতাম নাবিকরা প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে কথা বলত। তারপরও আমরা নাবিকরা কেমন আছে, সেটির ভিডিও নিতাম জলদস্যুদের কাছ থেকে।
‘সর্বশেষ গত দুই দিন আগে আমাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। তারপর সবকিছু আইন মোতাবেক করে জিম্মিদের ছাড়াতে সক্ষম হই।’