দেশজুড়ে গত বৃহস্পতিবার ঈদ উদযাপন করা হলেও আনন্দ ছিল না সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ক্রুদের পরিবারে, তবে শনিবার রাতে ক্রুরা মুক্ত হওয়ার পর ঈদের আনন্দ অনুভব শুরু করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এক মাসের বেশি সময় জিম্মি থাকার পর অবশেষে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজের ২৩ ক্রু।
জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম শনিবার রাত তিনটা ৩৫ মিনিটে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা আতিকুল্লাহ খানের মা শাহনুর আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদের তিন দিন পরেই যেন ঈদ এসেছে আমাদের ঘরে। আমার ছেলেসহ সবাই অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছে, এই খবর শোনার পর ভালো লাগছে সব। তারা এখন নিরাপদে দেশে ফিরলে টেনশন থেকে মুক্তি পাব।’
আতিক উল্লাহর ভাই আসিফ খান বলেন, ‘খবরটা শুনে আমাদের কী যে আনন্দ লাগছে, তা বলে বোঝাতে পারব না।’
জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমদের মা, স্ত্রী আর ছোট ভাই থাকেন চট্টগ্রাম শহরে।
তানভীরের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেসহ সবাই মুক্তি পেয়েছে। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। আমাদের কাছে এখন ঈদের আনন্দ।’
সোমালিয়ার দস্যুদের থেকে মুক্তির খবরে ক্রু মোহাম্মদ নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘এই দিনগুলো কীভাবে কেটেছে জানি না। আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে ঈদের আনন্দের দিন ছিল বিষাদে ভরা।
‘আজ যেন আমাদের খুশির ঈদ। কেএসআরএম গ্রুপের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তারা তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করেছে।’
আরেক ক্রু আইয়ুব খানের ভাই আওরঙ্গজেব রাব্বী বলেন, ‘ভাইয়ের জন্য দুশ্চিন্তায় এক মাস আমাদের বিষাদের দিন কেটেছে। আজ মনে হচ্ছে সত্যিকারের ঈদ এসেছে। আমরা খুবই খুশি।’
তরিকুল ইসলামের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইসহ সব নাবিক মুক্তি পেয়েছে। এটার চাইতে আনন্দের আর কিছু নাই।’
মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আজ আমাদের মধ্যে খুবই আনন্দ। এটার চাইতে বড় আনন্দ আর কী আছে?’
আরেক ক্রু আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেরা মুক্ত হয়েছে। কেমন ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ঈদ গেলেও আমাদের ঘরে কোনো আনন্দ ছিল না।
‘ঈদের দিন আইনুলের সাথে কথা হয়েছিল। তারপর দুই দিন আর কথা হয়নি। খুব শঙ্কায় ছিলাম ছেলের মুক্তি নিয়ে।’
গত ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের কবির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জিম্মি করা হয় জাহাজটিতে থাকা ২৩ বাংলাদেশি ক্রুকে।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল জাহাজটি।