বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে

  •    
  • ১০ এপ্রিল, ২০২৪ ১৮:৩৭

জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

রাত পোহালেই ঈদ। অথচ গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ক্যাপ্টেনসহ ২৩ ক্রুর পরিবারে কারও মুখে হাসি নেই; তাদের ঘরে নেই ঈদের আমেজ। চোখে মুখে দুর্ভাবনা, চিন্তার ভাঁজ কপালে।

চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন। কবে জিম্মিদশা থেকে তারা মুক্তি পাবেন, সেই দিকেই চেয়ে আছেন নাবিকদের পরিবার-স্বজনরা।

জিম্মি নাবিকদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তাদের ঘরে কাপড় চোপড়সহ ঈদের কোনো কেনাকাটা হয়নি। রোজা রেখে দিন কাটছে তাদের।

ঈদের আগে যদি নাবিকরা মুক্তি পান তাহলে এর চাইতে বড় খুশির খবর তাদের কাছে আর কিছু নেই। তারা মুক্তি না পেলে এবারের ঈদ স্বজনদের কাছে আনন্দের হয়ে উঠবে না।

জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম বলেন, ‘জিম্মি অবস্থায় বড় ছেলে বিপদের মধ্যে রয়েছে। সেখানে সে ভালো নেই। এ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছি না।’

আতিকের জন্য পরিবার ও স্বজন সবার মন খারাপ। তারা বলছেন, আমরা এখনও কেউ ঈদের কেনাকাটা করিনি। কারো মন-মানসিকতা ভালো নেই।

আতিক উল্লাহর ভাই আসিফ খান জানান, তাদের কারও মনে শান্তি নেই। ভাই ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের এ উৎকণ্ঠা শেষ হওয়ার নয়।

চট্টগ্রাম শহরে থাকেন জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমদের মা, স্ত্রী আর ছোট ভাই।

তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

জিম্মি জাহাজ এভি আব্দুল্লাহর ২৩ ক্রু। কোলাজ: নিউজবাংলা

জিম্মি জাহাজের নাবিক সামশুদ্দিন শিমুলের সাত বছর বয়সী মেয়ে আয়ুবা তাসনিম সাঈদা তার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছে ঈদে আব্বু বাড়ি আসবে কি না। শিমুল সোমালি দস্যুদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবেন, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও সাঈদাকে তার মা সান্তনা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার আব্বু ঈদের পরে আসবে।’

নাবিক তরিকুল ইসলামের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, ‘২৮ দিন ধরে ছোট ভাই জিম্মি অবস্থায় রয়েছে, সেখানে কীভাবে আমরা ভাল থাকি? মা-বাবাসহ পরিবারের কারও মন ভালো নেই।’

নাবিক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের জন্য ঈদের আনন্দটা এবার আসে নাই। স্বজনদের জন্য আমরা এতটাই দুশ্চিন্তায় আছি যে ঈদের কোনো প্রস্তুতি বা শপিং কিছুই হয়নি। আমার কিংবা আমার শিশুপুত্রের মাঝে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।’

জাহাজ মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজের ক্রুদের মুক্তির বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ঈদের পরে তাদের মুক্তির সম্ভাবনা বেশি। তাদের (দস্যুদের) যোগাযোগ চলছে। আমরা সবসময় ক্রুদের পরিবারের সঙ্গে আছি। ঈদের সময়ও আমরা তাদের পাশে থাকব।’

এ বিষয়ে বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজ ও এর ক্রু দুটোই উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, শিগগির তাদেরকে মুক্ত করতে পারব। তবে উদ্ধারের দিনক্ষণ বলাটা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (ক্রুদের) পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে। প্রথমত, যারা অপহরণ করেছে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। দ্বিতীয়ত, তাদের ওপর মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করা হয়েছে।

‘তারা ভালো আছেন, নিয়মিতভাবে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। এমনকি ভিডিও কলে কথাও বলছেন। সুতরাং যে উদ্বেগটা কিছুদিন আগে ছিল, সেটি এই মুহূর্তে নেই। আশা করছি তাদেরকে শিগগির মুক্ত করতে পারব।’

বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

অপরদিকে, বন্দি ক্রুদের চলতি মাসেই সুষ্ঠুভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের (ক্রুদের) পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো ছোট ঘটনা নয়, অনেক বড় ঘটনা। কাজেই দিন-তারিখ দিয়ে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, আমরা তাদের সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, ঈদের আগে নাবিকদের যেন দেশে আনতে পারি, কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। সেখানে একটা সমস্যা হয়েছে। তবে আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম জানান, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে।

ক্রুদের পরিবারে ঈদের আনন্দ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, ‘তাদের তো এই ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল না। মানসিক অশান্তি থেকে তাদের যতদ্রুত সম্ভব মুক্তি দেয়া যায়, সরকার সে চেষ্টা করছে।

‘তবে তাদের পরিবারে আর্থিক কোনো সমস্যা নেই। সরকার তাদের পরিবারের সঙ্গে আছে। জিম্মিদশা থেকে তাদের মুক্ত করার সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

জাহাজে জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে। সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা। থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার বাসিন্দা। ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর থানার বাসিন্দা। চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ ফেনী জেলার বাসিন্দা। ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানায়।

এছাড়া ক্রুদের মধ্যে মো. শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়, মো. আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়; মো. সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি উপজেলায়; মো. আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জ, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, মো. নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারাখন্দ এবং মো. আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালে বানাড়িপাড়া গ্রামে।

এ বিভাগের আরো খবর