গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনের জমি জবরদখল করে বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের জামাতার নির্মাণাধীন মার্কেট ভেঙে দিয়েছে বন বিভাগ।
এ ঘটনায় তথ্যদাতা সন্দেহে চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বেধড়ক মারধরে আহত হওয়ার অভিযোগ করেছেন বোয়ালী ইউপির এক সদস্য।
মারধরে আহত ব্যক্তি হলেন কালিয়াকৈর উপজেলার নলোয়া এলাকার হেলাল উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মজনু মন্ডল। তিনি বর্তমানে বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
স্থানীয় বাসিন্দা, ইউপি সদস্যের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যয়, কালিয়াকৈর উপজেলার নলোয়া বাজার এলাকায় বনের জমি জবরদখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছিল। স্থানীয় বোয়ালী বন বিট কর্মকর্তা আবু ইউনুছ ও বন বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বোয়ালী ইউপি চেয়ারম্যানের জামাতা শাহিন ওই মাকেট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে মঙ্গলবার সকালে মার্কেটটি ভেঙে দেন বন বিভাগের লোকজন।
মেম্বার ও তার পরিবারের অভিযোগ, ওই মার্কেট ভাঙার পেছনে মজনু মন্ডলের হাত রয়েছে, এমন সন্দেহে ইউপি চেয়ারম্যান আবজাল হোসেন খান, তার ছেলে নিসাদুল রহমান, ভাতিজা পলাশ, শ্যালক হাসানসহ কয়েকজন ওই বাজারের একটি দোকানের ভেতর থেকে ইউপি সদস্যকে তুলে বাইরে বের করেন। ওই সময় তারা সবাই মিলে চোর পেটানোর মতোই ওই ইউপি সদস্যকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। পরে আশপাশের লোকজন আহত অবস্থায় মজনুকে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় গতকালই ইউপি সদস্য মজনু মন্ডল কালিয়াকৈর থানায় অভিযোগ করেন। এরপর বুধবার দুপুরে ঘটনার তদন্তে যায় কালিয়াকৈর থানা পুলিশ।
খবর পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবীর, ওই ইউনিয়নের অন্যান্য ইউপি সদস্য হাসপাতালে মজনুকে দেখতে যান, কিন্তু তাকে দেখতে যাননি অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারমান আবজাল হোসেন খান।
আহত ইউপি সদস্য ও তার পরিবারের অভিযোগ, গত ছয় মাস আগে এক দিন সকালে কে বা কারা ৯ লাখ টাকার মালামালসহ তাদের মৎস্য খামারের গোডাউন আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল। বছরখানেক আগে রাতের আঁধারে তাদের বসতবাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ১৫ দিন আগে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মৎস্য খামারের রাস্তা বন্ধ করে দেন চেয়ারম্যানের লোকজন।
তাদের ভাষ্য, ইউপি সদস্যকে পেটানোর ঘটনা থেকে প্রতীয়মান যে, আগের ঘটনাগুলোতে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জড়িত।
আহত ইউপি সদস্য মজনু মন্ডল বলেন, ‘চেয়ারম্যানের জামাতা শাহিনের নির্মাণাধীন মার্কেট ভেঙে দিয়েছে বন বিভাগের লোকজন, কিন্তু চেয়ারম্যান ও তার স্বজনরা আমাকে সন্দেহ করে দোকানের ভেতর থেকে তুলে নিয়ে চোর পেটানোর মতো পিটিয়েছেন। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবজাল হোসেন খান মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ইউপি সদস্য মজনু মন্ডল বনের জমিতে স্থাপনা ভাঙাগড়ার সঙ্গে জড়িত। ওই স্থাপনাটি ভাঙলে স্থানীয় লোকজন তার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে।
‘আমি তাদের সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি, কিন্তু আমি তাকে মারধর করি নাই।’
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় বোয়ালী বিট কর্মকর্তা আবু ইউনুছের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
কালিয়াকৈর থানার ওসি এএফএম নাসিম বলেন, ‘ওই ইউপি সদস্যকে পেটানোর ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’