ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ মিলে এবার লম্বা ছুটিকে কাজে লাগাতে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসছেন মৌলভীবাজার। আর তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজার।
উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা-গাছ। একই সঙ্গে পাহাড়ি ঝর্ণার কলতান। জেলা জুড়ে রয়েছে প্রকৃতির নানা নৈসর্গিক সৌন্দর্য।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা একাধিক লেক আর শতাধিক পর্যটন স্পট এখন একেবারেই পর্যটক শূন্য। তবে ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে জেলার বিভিন্ন স্পটে লক্ষাধিক পর্যটক ঘুরতে আসবেন বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসন থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনেক রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল আগাম বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলোও দুই-এক দিনের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
৯ এপ্রিল থেকে অফিস হয়ে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। ঈদের সাথে যোগ হবে পহেলা বৈশাখ। সব মিলিয়ে লম্বা ছুটি। আর ছুটিতে অনেকেই পছন্দ করেন ঘুরতে। অবশ্য অনেক পর্যটকের পছন্দের জায়গা মৌলভীবাজার। কেননা সেখানে চা বাগান, লেক, পাহাড়, বন, জঙ্গল, গ্যাসকূপ, লেবু, আনারস, পান আর আগর বাগান দিয়ে অদ্ভুতভাবে সাজানো এখানকার প্রকৃতি। যুগ যুগ ধরেই প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে তুলছে এখানে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষদের।
এই জেলাটিকে সাজাতে কোনো কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। চা বাগানের সবুজ গালিচা, লাউয়াছড়ার প্রাণ-প্রকৃতি কিংবা হাওরের অথই জল এনিয়েই পযর্টন জেলা মৌলভীবাজার। এক সময়ে পর্যটক মুখর এই জেলার নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র দেখতে দর্শনাথীর নেই তেমন আনাগোনা।
প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো জেলার অন্তত ১০০টির ও বেশি দর্শনীয় স্থান। কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতা দর্শনীয় পর্যটন স্থানগুলোকে ঢেলে না সাজানোর কারণে প্রকৃতির এমন মায়াভরা আঙিনা এখন পর্যটকশূন্য। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। তবে এবারের ঈদে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটকদের জন্য মৌলভীবাজারের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- উঁচু-নিচু পাহাড়ে ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা-বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি ও ত্রিপুরাদের গ্রাম, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বাইক্কাবিল হাইল, বধ্যভূমি ৭১, নিমাই শিববাড়ী, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফিনলে চা বাগানের ভেতরে ডিনস্টন সিমেট্রি,ক্যামেলিয়া লেক। এ ছাড়া রয়েছে ক্ষুদ্র-নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনযাপন।
জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, রাজকান্দি বন খাসিয়া পল্লী, হাম হাম জলপ্রপাত, কলাবন, বড়লেখায় মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, রাজনগর উপজেলার কমলা রাণীর দীঘি, কাউয়াদীঘি হাওর, জলের গ্রাম অন্তেহরি।
জেলায় প্রায় দেড় শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ও কটেজগুলো সাজানো-গোছানোর কাজ শেষ হয়ে গেছে।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী আবুজার বাবলা বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা শ্রীমঙ্গলে আসবেন। তাদের সেবা দিতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রিসোর্টগুলো সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। আশা করছি এবার বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসবেন। ইতিমধ্যে ৬৫-৭০% বুকিং হয়েছে। ’
বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে এবার আমাদের ট্যুর অপারেটরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। এবারের ঈদকে সামনে রেখে আমরা বেশ কিছু প্যাকেজ বিক্রি করতে পেরেছি, আশা করছি ঈদের আগে আরও কিছু পর্যটক ভ্রমণ প্যাকেজ নেবে।’
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, ‘পর্যটকরা প্রতি বছর মতো ঈদের সময়টাতে চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে সপরিবারে ঘুরতে আসেন। আমরাও সেই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রতি বছরের মত এবারও আমরা পর্যটকদের বরণ করার জন্য অপেক্ষা আছি।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। সাদা পোশাকে ভ্রাম্যমাণ দল জেলাজুড়ে থাকবে। জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। কোনো পর্যটক যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে।’
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘ঈদের বন্ধে ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সজাগ আছি।’