রমজান মাস চলছে। এর মধ্যে গরম পড়তেই লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সিলেটের জনজীবন। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে নগরে ব্যাহত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহও। ফলে রোজাদাররা পড়েছেন চরম বিপাকে।
নগরের একাধিক বাসিন্দা জানান, চলতি মাসের শুরু থেকে গড়ে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ কারণে বারবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
সিলেট নগরীতে পানি সরবরাহ করে থাকে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। প্রতিষ্ঠানটির পানি শাখার এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না। একই কারণে সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছে।
নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা কাসমির আহমদ বলেন, ‘দিনে গড়ে ১৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ইফতার ও সেহরির সময়ও বিদ্যুৎ মিলছে না; মিলছে না পানিও। সবমিলিয়ে একেবারে দুর্বিষহ অবস্থা।’
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী রাহুল আহমদ বলেন, ‘এই ঈদের মৌসুমেও শান্তিতে ব্যবসা করা যাচ্ছে না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। জেনারেটের তেলের পেছনে লাভের সব টাকা চলে যাচ্ছে।’
বিদ্যুৎ ও পানির দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে নগরের মিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা মিশকাত হোসেন বলেন, ‘রোজার সময় ইফতারি, এমনকি সেহরির সময়ও পানি মিলছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি তোলাও যাচ্ছে না। আমরা কি এক আজব শহরে বাস করছি বুঝতে পারছি না।
‘বাথরুমসহ অনান্য কাজের জন্য পানি মিলছে না। এ অবস্থায় শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। বিদ্যুতের বাড়তি দাম দিলেও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ‘নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা প্রায় ১০ কোটি লিটার। বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার কারণে নগরীতে পানি সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি এলাকায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পানি সরবরাহ করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে ওই এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘পাম্প চালুর একটু পরে পরেই বিদ্যুৎ চলে গেলে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে যায়। তার ওপর অনেকে লাইনে মোটর বসিয়ে পানি উত্তলন করেন। যার ফলে সাধারণ গ্রাহকরা পানি পান না। আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে মোটর জব্দ করছি। তাবে এ বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন হবে হবে।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং বেড়েছে জানিয়ে পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমরা চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎও সরবরাহ পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘সিলেটে এখন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট, অথচ সরবরাহ মিলছে গড়ে ৭০ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’
গরম আরও বাড়লে লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এ কর্মকর্তা।