দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ পথ এটি।স্বাভাবিক সময়ে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কম থাকলেও ঈদের আগে এ পথে চাপ বাড়ে কয়েক গুণ। তবে পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর তেমন চাপ নেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে।
তারপরও ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহন পারাপারে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, অন্যান্য ঈদের মতো আসন্ন ঈদেও নিরাপদে যাত্রী ও যানবাহনকে নৌপথ পার করতে পারবে তারা।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন যাতায়াতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বারোবাড়িয়া থেকে শিবালয়ের পাটুরিয়া ফেরিঘাট ও আরিচা ফেরিঘাট পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মহাসড়কের ছোটখাটো খানাখন্দল ও ভাঙাচোরা মেরামত করা হয়েছে।
এ ছাড়া পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি ও লঞ্চে যাত্রী পারাপারের জন্য ফেরি ও লঞ্চঘাট মেরামত করা হয়েছে। ফেরি ও লঞ্চঘাটে যাত্রী ও যানবাহন আসামাত্রই ফেরি ও লঞ্চের দেখা যাচ্ছেন যাত্রী ও চালকেরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপবিরহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছোট-বড় ১৩টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হয়। কিন্তু ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৫টি ফেরি চলাচল করবে। এ ছাড়াও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ছোট-বড় ৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হবে।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২০টি লঞ্চ ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ১৩ লঞ্চ এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৪১টি স্পিটবোড দিয়ে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী পার করা হবে।
এ ছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য ৮টি ফেরিঘাট এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৩টি ফেরিঘাট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও তাৎক্ষণিক ফেরি বা পন্টুন মেরামতের জন্য ভাসমান কারখানা মধুমতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন কর্তৃপক্ষর (বিআইডব্লিউটিএ)’র আরিচা কার্যালয়ের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক সময়ে যাত্রীদের চাপ কম থাকলেও ঈদের আগে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বাড়বে। তবে পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীদের আগের মতো চাপ নেই। তবে যাত্রীদের চাপ যতই বাড়ুক, আমাদের সমস্যা হবে না। কারণ ইতোমধ্যে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপবিরহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)’র আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, ঈদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহন পারপার করতে বিআইডব্লিউটিসি’র পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়লেও আমাদের সমস্যা হবে না। কারণ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পর্যাপ্ত ফেরি ও ঘাট রয়েছে। সবার সার্বিক সহযোগিতায় ঈদের ঘরমুখো যানুষকে নিরাপদে নৌপথ পারাপার করতে পারবেন বলেও তিনি জানান।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌছিয়ে দিতে পুলিশ কাজ করছে। ঈদের আগে ও পরে মহাসড়ক, ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে পুলিশ বিশেষভাবে কাজ করবে। সে জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে পোষাকে, সাদা পোশাকে,মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের ১২শত পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। আশা করছি, গতবারের মতো এবারও ঘরমুখো মানুষকে নিরাপদে ও ভোগান্তীহীনভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারব।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের পাশপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া যাত্রীদের জন্য অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প, বিশ্রামাগার ও টয়লের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার সার্বিক সহযোগিতায় ঘরমুখো মানুষকে নিরাপদ ঈদ যাত্রা উপহার দিতে পারব।