বাড়ির আঙিনায় পা রাখতেই নাকে এসে লাগে পোড়া গন্ধ। গবাদি পশু, আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আগুনে। লেলিহান শিখায় পুড়েছে শখের কাপড় আর জামাকাপড় রাখার আলমারি।
দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর যত্নে গড়ে এসব জিনিস এখন কয়লা হয়ে পড়ে আছে উঠানে।
এমন মাঝে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে এসেছে রমজান মাস। পবিত্র এ মাসের বিদায়লগ্নে উঁকি দিচ্ছে খুশির ঈদ, তবে সেই খুশির ছটা যেন এখানে আসার আগেই শেষ হয়ে গেছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর মধ্য ঝাড়গাঁ গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে ৩১টি পরিবার। এসব পরিবারের অবস্থা জানতে গিয়েছিল নিউজবাংলা।
গ্রামে পা রাখতেই ছুটে আসে একদল শিশু। কাছে এসে হাঁপাতে থাকা মুখগুলো অব্যক্ত ভাষায় বলছে, ‘সাহায্য পেতে চাই।’ একে একে নামও বলে গেল মুন্না, মারুফ, মিলন, শাহিনুল, রাজু, সানজিদ, মজিবর, লুৎফর, সোহেল, মান্নান, নুর ইসলাম ও হুসেন আলীরা।
তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অন্য সদস্যরা এসে জমায়েত হলো। তাদেরও ধারণা, ঈদের নতুন পোশাক ও অন্যান্য উপহার নিয়ে হয়তো তাদের দরজায় কেউ হাজির হয়েছে। প্রতিটি মানুষই একটু সহানুভূতির জন্য একেকটা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল।
ঘর মুছতে মুছতে কাদা হাতে ছুটে আসেন সাহেরা খাতুন নামের এক নারী। বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে তিনি দেখালেন নিজের দুটি প্রতিবন্ধী সন্তানকে। উঠানে গামছায় মুড়ে তাদের চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
সাহেরার দুঃখ, ‘এই ঈদে নতুন একটা সুতোও নেই তাদের পরানোর মতো।’
বৃদ্ধা তসলিমা বেগম বলেন, ‘আগুনে আমাদের সব পুড়ে গেছে। নাতি-নাতনির জামাকাপড়ও পুড়ে গেছে। সামনে ঈদ।
‘গ্রামে প্রতিদিন নতুন কাপড় কিনছে অনেকে। আর আমার নাতি-নাতনিরা শুধু দেখছে। ঘরপোড়া গন্ধের মধ্যেই এবার আমাদের ঈদ কাটবে।’
কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত মজিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, যখন আগুন লেগে ঘরবাড়ি পুড়ে যায়, তখন সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও খাদ্যসামগ্রী ও কম্বল দেয়া হয়েছিল। ঘর নির্মাণের জন্য নাম, ঠিকানাও নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ আসছে। অথচ শিশুদের চাহিদা আমরা কেউ পূরণ করতে পারছি না। এ সময় ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।’
দিনমজুর আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিজেদের থাকার ঘরই এখনও তৈরি করা হয়নি। মায়ের ঘরে থাকি। এবারের ঈদে নতুন পোশাক কেনা নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের শুধু শুধু লজ্জা দেয়া।'
কথা বলার সময় কেউ হাত টেনে নিয়ে দেখান পোড়া আসবাপত্র, কেউ আবার দেখান পোড়া ঘরের শেষ চিহ্ন। কেউ কেউ দেখান গবাদি পশুর পোড়া ঘরের অবশিষ্ট কিংবা পোড়া চাল।