এবার ঈদে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল ছেলের। সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ করার কথা ছিল, কিন্তু ছেলে এখন হাজার-হাজার মাইল দূরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।
কান্না বিজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো জানান সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর চিফ ইঞ্জিনিয়ার নওগাঁর এএসএম সাইদুজ্জামানের বাবা আবদুল কাইয়ুম। এবার আবদুল কাইয়ুমের বাড়িতে নেই কোনো ঈদের আনন্দ। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় গুনছেন প্রহর।
গত ১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির সংবাদের প্রতীক্ষায় সময় পার করছেন সাইদুজ্জামানের বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী। প্রতীক্ষার প্রহর যেন তাদের শেষ হতে চাইছে না। তারা চান ঈদের আগেই যেন তার সন্তানের মুক্তি মেলে।
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি নওগাঁ শহরের দুবলহাটি রোডের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল কাইয়ুমের ছেলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহর’ চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান।
ঈদের আগেই সরকার বা জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সংবাদের অপেক্ষায় আছেন বন্দি সাইদুজ্জামানের বাবা, মা, স্ত্রী ও স্বজনরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাইদুজ্জামান ২০ বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশি বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজে কাজ করছেন। এমভি আবদুল্লাহ এসআর শিপিং লিমিটেড কোম্পানির একটি জাহাজ।
সাইদুজ্জামানের বাবা আবদুল কাইয়ুম বলেন, “আমার ছেলে এবার ঈদে বাড়িতে আসার কথা ছিল। বলছিল, ‘বাবা ঈদে বাড়ি যাব। ছুটি নিয়ে সবাই মিলে ঈদ করব একসাথে।’ কিন্তু ছেলে আমার হাজার-হাজার মাইল দূরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে।
“প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটা করলেও এবার কিছুই হয়নি। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছি আমরা। দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরে আসুক সেই কামনা করছি।”
তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে যোগাযোগ করা যাচ্ছে, জলদস্যুরা কোনো বাঁধা দিচ্ছে না। আর জাহাজ কোম্পানি ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা চেষ্টা করছে ফিরিয়ে আনার।’
সাইদুজ্জামানের মা কোহিনূর বেগম বলেন, ‘আমাদের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। ছেলেকে দ্রুত ফিরে পেতে চাই আমরা। সরকার যেন দ্রুত ঈদের আগেই আমার ছেলেসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সেই দাবি ও অনুরোধ করছি।’
সাইদুজ্জামানের স্ত্রী মান্না তাহরিন শতধা বলেন, ‘ঈদের আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ হবে যদি দ্রুত স্বামীকে ফিরে পেতাম। কবে ফিরবে কিছুই জানি না। সরকার যেন দ্রুত উদ্যোগ নেয়। খুব চিন্তার মাঝে দিন রাত পার করছি আমরা। যে কোনো মূল্যেই যেন আমার স্বামীকে ফিরে নিয়ে আসা হয়।’
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম রবিন শীষ বলেন, ‘সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকেই সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও জাহাজ মালিক পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।’