‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আমি। ঢাকাতে চাকরিও করেছি, তবে করোনার সময় চাকরি হারানোর ভয়ে হতাশায় পড়ি। কী করা যায়, সেগুলো নিয়েই চিন্তা করতাম। ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে কয়েক বছর আগে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে দেখতে পাই, ভারতের তামিলনাড়ুতে পরিবেশবান্ধব এগুলো (ক্রোকারিজ) বানানো হচ্ছে।
‘পরে এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করে দেখি সেখানকার (তামিলনাড়ু) ব্যবসায়ীরা পরিত্যক্ত সুপারির পাতা ও পাতার খোল দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানাচ্ছেন ব্যাপক পরিসরে। সেগুলো দেখে আমার ভালো লাগে।’
সুপারির পাতা ও খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব থালাবাসনসহ ক্রোকারিজ পণ্য তৈরির শুরু নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নাহিদ হাসান। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের বাগবাড়ী গ্রামের এ তরুণের হাত ধরে গড়ে উঠেছে ‘ইকো-বাজার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি তৈরি করছে প্লাস্টিকের বিকল্প নানা পণ্য।
পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবসায় যে কারণে
‘যেহেতু ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ নিয়ে ভাবতাম, তাই তখন থেকেই পরিবেশবান্ধব কিছু করার ইচ্ছা ছিল এবং সেখান থেকেই এসব পণ্য তৈরির উদ্যোগ নিই। সেই ভালো লাগা থেকে আমিও চিন্তা করি এমন কিছু করার’, বলেন ইকো-বাজারের প্রতিষ্ঠাতা।
‘দুই বছর আগে প্রায় ১১ লাখ টাকায় ভারতের তামিলনাড়ু থেকে মেশিন এনে কারখানা স্থাপন করি। বানানো শুরু করি বিভিন্ন সাইজের ওয়ান টাইম প্লেট, বাটি, ট্রে, টিফিন বাক্স ইত্যাদি’, যোগ করেন তিনি।
প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যগুলোর চাহিদা কেমন, সে বিষয়ে এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘প্রথমে এগুলো তেমন জনপ্রিয় ছিল না, কিন্তু এখন ভালো চলে। দামও সাশ্রয়ী। মাত্র ছয় থেকে ১২ টাকার মধ্যেই যেকোনো আইটেম মিলে। এখন দেশ ও বিদেশেও মিলছে সাড়া।’
যেভাবে তৈরি হয় প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য
সুপারি গাছের ঝরে পড়া ফেলনা পাতা ধুয়েমুছে যন্ত্রের ছাঁচে ফেলে নির্দিষ্টমাত্রার তাপে তৈরি হয় ওয়ান টাইম বা একবার ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প ক্রোকারিজ।
নাহিদ জানান, সুপারি গাছের পাতার এসব পণ্যসামগ্রী রিসোর্ট, রেস্তোরাঁর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কিনছেন। এ ছাড়া গায়ে হলুদ, জন্মদিনের মতো অনুষ্ঠান এবং ঘর সাজাতেও ব্যবহার করা হচ্ছে এসব পণ্য।
ইকো-বাজারের হয়ে মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি হাতের কাজ করা কলেজছাত্র শিমুল বলেন, ‘পরিবেশ-সচেতন স্থানীয় যুবকরা এখানে সুপারির পাতা বিক্রি করে যেমন বাড়তি টাকা আয় করছেন, তেমনি উৎপাদনভিত্তিক শ্রম দিয়েও অনেকে আয় করছেন বাড়তি টাকা। আমিও এখানে কাজ করি লেখাপড়ার পাশাপাশি।
‘আগে নিজের খরচ চালাতে পারতাম না। সবসময়ই হাত পাততে হতো পরিবারের কাছে, কিন্তু এখন উল্টো নিজের খরচ নিজেই চালাই। পাশাপাশি আমার পরিবারের পেছনেও খরচ করতে পারি।’
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চান উদ্যোক্তার বাবানাহিদের বাবা আবদুল লতিফ বলেন, ‘উদ্যোগ ভালো, কিন্তু রয়েছে হতাশাও।’
হতাশার কারণ হিসেবে আবদুল লতিফ বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সর্বমহলে পরিবেশবান্ধব পণ্যকে জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না।
‘সরকার যদি বিষয়টি দেখত, তাহলে এ দেশের অনেক বেকার যুবক এমন উদ্যোগ নিয়ে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারত। পাশাপাশি এসব জায়গায় অনেক বেকার মানুষও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারত।’
সহায়তার আশ্বাস বিসিকের
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) টাঙ্গাইলের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তহিদুল হক বলেন, ‘মানুষ ও প্রকৃতির জন্য উপকারী এবং প্লাস্টিকের ভয়াবহ দূষণ থেকে প্রকৃতি ও মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পরিবেশবান্ধব এসব বিকল্প পণ্যের ব্যবহার ও প্রসার ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’