ফরিদপুর শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কুমার নদের ওপর লোহার তৈরি অস্থায়ী বেইলি ব্রিজটি এখন শহরবাসীর গলার কাঁটা।
ব্রিজটি দিয়ে চলে না কোনো যানবাহন। এই সুযোগে ভাসমান হকার, ভিক্ষুক আর রাতে বারবনিতার ভিড় লেগে থাকে। হেঁটে সরু এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করাটাও কষ্টকর। একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি উঠেছে ওই স্থানে।
একটি প্রাচীন জেলা শহর হিসেবে শহর ফরিদপুরের বুকে অনন্য এক বৈশিষ্ট্য হলো কোনো বাঁক ব্যতীত সোজাসুজি চলে যাওয়া প্রায় তিন কিলোমিটার বিস্তৃত মুজিব সড়ক। স্বাধীনতার আগে যার নাম ছিলো জিন্নাহ রোড। আর এই তিন কিলোমিটার সড়কের মাঝামাঝি স্থানে কুমার নদের ওপর এই বেইলি ব্রিজটির অবস্থান। তবে আগে এটি বেইলি ব্রিজ ছিল না।
১৯৩৫ সালে জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ব্রিজটি নির্মাণ করেন তৎকালীন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান চৌধুরী। কুমার নদের শহরের অংশে নির্মিত সর্বপ্রথম ব্রিজ এটি। ব্রিজের এক প্রান্তে ব্যস্ততম হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজার এবং অন্য প্রান্তে তিতুমীর বাজার ও নিউমার্কেট। হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন এর ওপর দিয়ে চলাচল করতো।
১৯৮৮ সালের বন্যায় নদীর তীব্র স্রোতে ব্রিজটি ধসে যায়। এরপর সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে বেইলি ব্রিজ তৈরি করা হয়। তখন থেকেই যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১১ সালের অক্টোবরে রাতের আঁধারে একটি ট্রাক এই বেইলি ব্রিজের ওপরে উঠে গেলে ব্রিজটি আবারও ধসে যায়। ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য আলিমুজ্জামান বেইলি ব্রিজ মেরামত করে।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার মাহফুজুল আলম মিলন বলেন, ‘বেইলি ব্রিজ সাধারণত টেম্পোরারি কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই বেইলি ব্রিজ এখন আমাদের কপালের সাথে এমনভাবে সিল দিয়ে দিয়েছে যে, এটিই এখন আমাদের ভাগ্যের সাথে লেগে গেছে। এই বেইলি ব্রিজের কারণে আমাদের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা এখন। শহরে মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নেয়াই কষ্টকর।’
তিনি গুলশান এবং বনানীর সঙ্গে সংযোগ ব্রিজ কিংবা গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর ওপর তৈরি ব্রিজের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এখন এই বেইলি ব্রিজটি ভেঙে সেখানে এ ধরনের একটি পার্মানেন্ট ব্রিজ নির্মাণ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর তো একটি পুরাতন জেলা। এখানে এমন জোড়াতালির ব্রিজ থাকা উচিত না।’
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্রিজটি সংকীর্ণ হওয়ায় নানা সমস্যা পোহাতে হয় শহরবাসীকে। যানবাহন নিয়ে বাইপাসে ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে রাতবিরাতে অনেককে ছিনতাইকারীর কবলেও পড়তে হয়। তাতে প্রাণও গেছে কারো কারো।’
তিনি বলেন, ‘ব্রিজটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় এই সড়কের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সেখানে স্থায়ীভাবে একটি প্রশস্ত ব্রিজ নির্মাণ করা হলে শহরে যানজট নিরসনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।’
শহরের সাধারণ মানুষের মতে, বর্তমানে এই বেইলি ব্রিজে যানবাহন চলাচল না করায় পুরো শহরের যানবাহনের চাপ পড়ছে বড় ব্রিজের ওপরে। অপরিচ্ছন্ন ও অবহেলিত ব্রিজটি এই সুযোগে যেনো ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দুই বাজারে যাবতীয় বর্জ্য-আবর্জনা ছাড়াও শহরের ড্রেনের নিষ্কাশনের স্থল এই কুমার নদ। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে দখল করে নেয়া হচ্ছে নদীর পাড়। শহরের বুকে বেইলি ব্রিজটিকে যুগের পর যুগ অকার্যকর করে রাখায় এই সুযোগ নিচ্ছে সুযোগসন্ধানীরা।
তারা বলছেন, যেহেতু শহরের পরিধি, যানবাহন ও জনসংখ্যা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে, অনতিবিলম্বে বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।