বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দখল ও অবৈধ যানবাহন বড় শঙ্কা

  • প্রতিনিধি, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)   
  • ২ এপ্রিল, ২০২৪ ১৭:৫১

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর অবাধে চলছে হাটবাজার ও চোরাই ইট-বালু ব্যবসা। দেদারসে চলছে অবৈধ থ্রি-হুইলার। মহাসড়ক থেকে এগুলো উচ্ছেদ করা না হলে ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করতে প্রশাসনের নেয়া সব প্রস্তুতি নিষ্ফল হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন শ্রমিক, যাত্রীসহ স্থানীয়রা।

দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর মধ্যে একটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করার লক্ষ্যে মহাসড়কের সাতটি ওভারপাস খুলে দেয়াসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এতোসব উদ্যোগ সত্ত্বেও এই মহাসড়কের অংশবিশেষ দখল করে ব্যবসা ফেঁদে বসায় ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

মহাসড়কের ওপর অবাধে চলছে হাটবাজার ও চোরাই ইট-বালু ব্যবসা। দেদারসে চলছে অবৈধ থ্রি-হুইলার। মহাসড়ক থেকে এগুলো উচ্ছেদ করা না হলে ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করতে প্রশাসনের নেয়া সব প্রস্তুতি নিষ্ফল হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন শ্রমিক, যাত্রীসহ স্থানীয় লোকজন।

সরেজমিনে সড়ক সংশ্লিষ্ট ও পরিবহন শ্রমিক-যাত্রীসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১২২টি আঞ্চলিক সড়কের যানবাহন চলাচল করে। ফলে এ মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়কে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারও বলা হয়।

চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় মহাসড়কের পুরো লেন দখল করে চলছে বিকিকিনি। ছবি: নিউজবাংলা

ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজটের কারণে এক সময় চরম দুর্ভোগের শিকার হতেন ঘরমুখো মানুষ। ফলে এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতের বিষয়টি মনে হলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন যাত্রীরা। চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ছিল একই অবস্থা।

সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এখন ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচল অনেকটাই স্বস্তিকর। কিন্তু বছরে দুটি ঈদ, দুর্গাপূজাসহ বড় ছুটির সময়ে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে এখনও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গাজীপুর এলাকার শিল্প-কলকারখানাগুলোতে একসঙ্গে ছুটি হলে এ মহাসড়কে চাপ বৃদ্ধি পেয়ে যানজট আরও তীব্র হয়।

এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করতে ২৪ মার্চ মহাসড়কের সাতটি ওভারপাস খুলে দেয়া হয়। এদিন এগুলো উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩২৩ মিটার এয়ারপোর্ট, ১৮০ মিটার জসীমউদ্‌দীন, ১৬৫ মিটার ইউটার্ন-১ গাজীপুরা, ১৬৫ মিটার ইউটার্ন-২ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ২৪০ মিটার ভোগড়া ও ৫৬৮ মিটার গাজীপুর চৌরাস্তা ওভারপাস।

মহাসড়কের সফিপুর এলাকায় ওভারপাসের নিচের পুরোটা দখল করে বসানো হয়েছে বাজার। ছবি: নিউজবাংলা

এছাড়াও প্রতিবছরের মতো এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগ, হাইওয়ে, জেলা ও থানা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। কিন্তু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রা ত্রিমোড়, বোর্ডঘরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ওভারপাসের নিচে ও ফুটপাতসহ মহাসড়ক দখল করে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে বসছে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট ও হাটবাজার।

এছাড়াও খাড়াজোড়া, কালিয়াকৈর বাইপাস, শ্রীফলতলী, হিজলতলী, সূত্রাপুর, বোর্ডঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের ওপর প্রায় অর্ধশত চোরাই ইট-বালু স্পট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেট চক্র প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে মহাসড়কের ওপর এই ব্যবসা পরিচালনা করছে।

অপরদিকে চাঁদা দিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন। মহাসড়কের ওপর যততত্র রয়েছে এসব যানবাহনের অবৈধ স্টেশন। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও।

চন্দ্রা মোড়ে অবৈধ অটোরিকশার রাজত্ব। ছবি: নিউজবাংলা

এসব ভ্রাম্যমাণ দোকাটপাট, হাটবাজার, চোরাই ইট-বালুর ব্যবসা ও থ্রি-হুইলার সিন্ডিকেট চক্র প্রতিদিন সব মিলিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, ওই টাকার ভাগ যাচ্ছে কিছু অসাধু পুলিশ, সড়ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পকেটেও। আর সেজন্য মহাসড়ক ঘিরে প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায় অপরাধ সংঘটিত হলেও সংশ্লিষ্টরা যেন নীরব দর্শক।

মহাসড়কের অংশবিশেষ দখল করে ব্যবসা পরিচালনা, অবৈধ যানবাহনের স্টেশন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রী উঠানামা করানো যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ঈদযাত্রা শুরুর আগ মুহূর্তেও এসব অনিয়ম চলমান থাকায় এবার ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পথচারী ও যাত্রী আয়েশা আক্তার, আলমগীর হোসেন, লাল মিয়া, সাদ্দামসহ অনেকেরই মন্তব্য, প্রশাসনের লোকজন যত যাই বলুক, যানজট লাগবেই। যানজট ছাড়া কোনো ঈদে আমরা বাড়ি যেতে পারি না।’

পিকআপ চালক নুর ইসলাম ও পিপলু হোসেন, বাসচালক মোখলেজ মিয়া, ‘তজু মিয়াসহ অনেকে বলেন, ‘মহাসড়কের ওপর হাটবাজার, ইট-বালুর ব্যবসা চলায় প্রশস্ততা কমে গেছে। এছাড়া আমাগো লগে পাল্লা দিয়ে আগে যাচ্ছে অটোরিকশা, সিএনজি। ফলে দুর্ঘটনা ও যানজট লেগে যায়।’

মহাসড়কে ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে অবৈধ অটোরিকশা। কালিয়াকৈরের হরিণহাটি এলাকার চিত্র। ছবি: নিউজবাংলা

প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান নাওজোড় হাইওয়ে থানার ওসি শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের যানজটপ্রবণ সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় ৩২টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। আর ঈদকে ঘিরে ফুটপাত দখলমুক্ত ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়াও থ্রি-হুইলার, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ইট-বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান।’

সম্প্রতি এই মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানান ঢাকা রেঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গতবার ড্রোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও এবার আরও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এবার টকিং ড্রোন ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি থাকছে বডি লাইভ ক্যামেরা যা সরাসরি হেড অফিসে চন্দ্রা কন্ট্রোল বক্সের মাধ্যমে মহাসড়ক নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, ঈদকে ঘিরে মহাসড়কের যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহাসড়কের পুলিশ কাজ করছে। যাতে যানজট না থাকে সে বিষয়ে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিভাগের আরো খবর