চৈত্রের শেষ দিকে এসে রোববার রাতে সিলেটের ওপর দিকে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আধা ঘণ্টাব্যাপী এই ঝড়ের পর থেকে ১৪ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎহীন সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা।
এ ছাড়া শিলা পড়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন। এদের মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জের বিল্লাল আহমেদ (৪০) নামে একজনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার রাত সোয়া ১০টা থেকে প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী এই ঝড় এবং ৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে বেশ কিছু বাড়িঘরের কাচ ভেঙেছে, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যানবাহনেরও।
ঝড়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছ ভেঙে পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। তবে সকালে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা মুহিবুর রহমান বলেন, ‘এমন শিলাবৃষ্টি আগে কখনো দেখিনি। বাড়ির চাল ফুটো হয়েছে, বারান্দায় রাখা গাড়ির কাচ ভেঙে গেছে।’
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বছরের এই সময়ে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিকে কালবৈশাখী বলা হয়ে থাকে। কালবৈশাখীতে শিলাবৃষ্টি হয়।
এদিকে ঝড়ে সিলেটের অনেক এলাকার বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে গেছে। বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সকালে নগরের বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক হলেও বেলা ১২টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা অষ্ট্রগ্রাম এলাকার বাসিন্দা নেহাল আহমদ সোমবার দুপুরে বলেন, রোববার রাতে ঝড়ের শুরুতে বিদ্যুৎ চলে যায়। এখন পর্যন্ত আসেনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, প্রবল ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, কারও এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে থাকলে বা ব্যানার ফেস্টুন অথবা গাছের ডাল-পালা বৈদ্যুতিক লাইনে পরে থাকলে ০১৬২৫-০৩৮৭৮৪ নাম্বারব অবগত করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ঝড়ের সময় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যাওয়ার পথে একটি সিএনজি অটোরিকশায় থাকা তিন যাত্রী আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে যাওয়ার সময় পুরাতন শিল্পকলা একাডেমি এলাকার সড়ক অতিক্রম করার সময় গাছ পড়ে আহত হয়েছেন। গাছ পড়ে সিএনজিটি দুমড়েমুচড়ে গেছে।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। গুরুতর আহতরা হলেন রয়েল আহমদ ও সাদ্দাম হোসেন, বাকিজনের নাম ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
ঝড়ে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে শতাধিক দোকান ঘর ও ঘরবাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলার পাগলা এলাকার বাসিন্দা জহুর আলী বলেন, আমাদের এলাকার বাজারে শতাধিক দোকান ঝড়ে নষ্ট করছে। কিছু কিছু মানুষের ওপর টিন বাঁশ পড়ে আহত হয়েছেন। তারা স্হানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা অনুমান করছি প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ঝড়ের সঙ্গে মাঝারি শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে হাওরের আগাম ধানের জাতের কিছু ক্ষতি হতে পারে। আমরা সব জায়গায় খবর পাঠিয়েছি। তবে এখন হাওরে ফসলের ক্ষতি তেমন হবে না বলে জানান তিনি।