সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে আড়াই মাস ধরে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৯ মার্চ রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় ওই তরুণীর মা বাদী হয়ে মামলা করার পর থেকে আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম (৪০), একই এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবদুল মনাফ (৩৮) এবং রেখা বেগম (৩০) নামের এক নারী। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টায় রয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী নগরের শেখঘাটের একটি কারখানায় কাজ করতেন। অভিযুক্ত রেখা বেগম তার প্রতিবেশী। ভুক্তভোগীকে শহরের বাসায় রেখে গ্রামে বেড়াতে যান স্বজনেরা। এ সময় ওই তরুণীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেখা। ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘সালাম নেতা টাইপের লোক, বিপদে-আপদে উপকারে আসবে।’ গত ৭ জানুয়ারি রেখার মাধ্যমে তরুণীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান সালাম। এরপর টানা ২২ দিন সালাম তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।
এজাহারে বলা হয়, এর মধ্যে ওই তরুণীর মা-বাবা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসেন। বাসায় মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যেতে চাইলে প্রতিবেশী রেখা বেগম তাদের সালামের কাছে নিয়ে যান। সালাম তাদের জিডি করতে নিষেধ করে নিজেই খুঁজে দেয়ার আশ্বাস দেন। এর দু-তিন দিন পর তরুণীর মা-বাবা আবার সালামের কাছে গেলে তিনি বিকেলের দিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান।
ওই দিন বিকেলে তরুণীকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সালাম জানান, তরুণী এক প্রবাসীর বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করেছেন। স্বজনেরা প্রবাসীর নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে ওই তরুণী তার মা-বাবাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার তিন দিন পর আবার কাজে যাচ্ছিলেন তরুণী। তখন সালাম বিয়ে ও ভালো জায়গায় কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। কথামতো সালামের সঙ্গে আবার দেখা করেন ওই তরুণী। তিনি তরুণীকে কিছু টাকা দিয়ে নগরের কাজীরবাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় পাঠান। সেখান থেকে অভিযুক্ত মনাফ তাকে হবিগঞ্জের বাহুবলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান।
সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ একাধিক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী কৌশলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিলেটে পালিয়ে আসেন। স্বজনেরা তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে তরুণীর মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
এ বিষয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ বলেন, আবদুস সালাম সংগঠনের ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।