বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শঙ্কা কাটিয়ে গমের বাম্পার ফলন মেহেরপুরে, দামও ভালো

গম ব‍্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আড়তে সপ্তাহখানেকের বেশি হবে স্থানীয় গম আসতে শুরু করেছে। এ বছর কৃষকদের গমের ফলন বেশ ভালো। সে হিসাবে আড়তে গমের আমদানি হচ্ছে ভালো। আমরা বতর্মানে আকারভেদে প্রতি মণ গম সংগ্রহ করছি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’

বীজের বাড়তি দাম, আবাদের মাঝ সময়ে শিষ মরা রোগের সঙ্গে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মেহেরপুরের অনেক গমচাষি। কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন নিয়ে তাদের মধ্যে ছিল শঙ্কা, তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে গমের বাম্পার ফলন হওয়ার পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

জেলায় এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে গম ৪.১ টন উৎপাদন হয়েছে। মণ প্রতি গম বিক্রি করছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পযর্ন্ত। গমের মাঠের অধিকাংশ গমের দানাও মোটা তাই কৃষকদের ফলন বেড়েছে।

মেহেরপুর জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে গম চাষ হয়েছে, যা আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভূমিকা রাখবে। তা ছাড়া অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে সঠিক সময়ে কৃষকরা মাঠ থেকে ফসল তুলতে পেরেছেন। এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই আগ্রহ বেড়েছে গম চাষে।

জেলার তিনটি উপজেলা গাংনী, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার ফসলি মাঠ পরিদর্শন করে দেখা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গমের আবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মাঠ থেকে পাকা গম এখন সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। ফসলের মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পাকা গম কেটে মাড়াইয়ের কাজে ব‍্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

অধিকাংশ গম ঘরে উঠলেও এখনও মাঠেই রয়েছে অনেক গম। চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে মেঘের চোখ রাঙানি থাকলেও আধুনিক কৃষি পদ্ধতির কারণে গম মাড়াইয়ের কাজ অনেকটা সহজতর হয়েছে।

কৃষি বিভাগের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে গম চাষের লক্ষ‍্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৬৬ টন। আর এবার প্রতি হেক্টর জমিতে চার দশমিক এক টন উৎপাদন হচ্ছে।

ব‍্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর গমের দানা বেশ বড় বড় হয়েছে। গমের বাজার মূল‍্যও ভালো। মণপ্রতি গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পযর্ন্ত।

জেলার গাংনী উপজেলার নিশিপুর গ্রামের গমচাষি আনোয়ার বলেন, ‘এ বছর এক বিঘা জমিতে আমি গম কেটে মাড়াই শেষে ২০ মণ গম পেয়েছি, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড। আর আমার নিজের জমি হওয়ায় সব মিলিয়ে ছয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর বতর্মানে প্রতি মণ গম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’

আরেক চাষি তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেড় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। শুরুতে গম ভালো হয়েছিল, মাঝখানে যখন শিষে গমের দানা বাদতে শুরু করে, ঠিক তখনই শিষ মরা রোগ শুরু হয়।

‘ভয় হয়েছিল ভালো ফলন পাব কি না, তবে আল্লাহর রহমতে শেষমেশ ভালো ফলন পেয়েছি। আবার এ বছর গমের দাম বেশ ভালো।’

একই এলাকার গমচাষি ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমাদের মাঠে এবার ব‍্যাপক গমের আবাদ হয়েছে। আমি দুই বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছি। আজ সপ্তাহখানেক হবে গম কেটে মাড়াই শেষে ফসল ঘরে তুলেছি।’

‘আমার এক বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছি ১৭ মণ, আরেকটিতে পেয়েছি ২০ মণ হারে। যেখানে কম ফলন হয়, সেই গমটিতে শিষ মরা রোগ হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম ফলন একেবারে পাব না, তবে আল্লাহ খুব ভালো ফসল দিয়েছেন।’

গম ব‍্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আড়তে সপ্তাহখানেকের বেশি হবে স্থানীয় গম আসতে শুরু করেছে। এ বছর কৃষকদের গমের ফলন বেশ ভালো। সে হিসাবে আড়তে গমের আমদানি হচ্ছে ভালো। আমরা বতর্মানে আকারভেদে প্রতি মণ গম সংগ্রহ করছি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’

আরেক ব‍্যবসায়ী শিপন বলেন, ‘আমরা প্রত‍্যন্ত অঞ্চল থেকে গম সংগ্রহ করে থাকি। আজ ১০ দিনের মতো হবে গম সংগ্রহ শুরু করেছি। এবার মাঠের অধিকাংশ গমের দানা বেশ মোটা, যার ফলে কৃষকদের ফলন বেড়েছে। তা ছাড়া গত বছরের চেয়ে এ বছর মাঠে গমের আবাদ বেশি।’

মেহেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কৃষ্ণকুমার হালদার বলেন, ‘মেহেরপুরে ব্লাস্ট প্রতিরোধী উচ্চফলনশীল গমের জাত বারি-৩৩ ও ডব্লিউএমআইআর গম-৩ নামের দুটি গমের জাত উদ্ভাবনের ফলে এ অঞ্চলে গম চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।

‘আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে চাষিদের আগ্রহ বাড়ায় গম চাষাবাদ থেকে মাড়াইয়ের পদ্ধতি অনেক সহজতর হয়েছে। তা ছাড়া গমের বতর্মান বাজারদর ও চাহিদাও বেশ ভালো, যার ফলে চলতি মৌসুমে গম উৎপাদন লক্ষ‍্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর