লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন।
চন্দ্রপুর সীমান্তের মেইন পিলার ৯১৩-এর ৪ নম্বর সাবপিলারের কাছে শুক্রবার রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো যুবকের নাম মুরুলী চন্দ্র বর্মণ, যিনি চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়ার সুশীল চন্দ্র বর্মণের ছেলে।
লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার গভীর রাতে চন্দ্রপুর (চারখুঁটি) সীমান্তের মেইন পিলার ৯১৩-এর ৪ নম্বর সাবপিলার এলাকা দিয়ে ভারতীয় একদল গরু ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় বাংলাদেশি ১০ থেকে ১৫ জন ভারত থেকে গরু আনার চেষ্টা করেন। ওই সময় ভারতীয় গোহাটি ফ্রন্টিয়ারের গোপালপুর-৭৫ ব্যাটালিয়নের চিত্রাকোট ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা গুলি ছোড়েন।
এতে উত্তর বালাপাড়া এলাকার মুরুলী চন্দ্র বর্মণ (৪১) পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। অন্যদিকে চন্দ্রপুর এলাকার নুর ইসলামের ছেলে লিটন মিয়া (৪০) ও একই এলাকার আজিমুদ্দিন ওরফে আজিমুলের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ হন।
ওই সময় গরু পাচারকারী দলের অপর সদস্যরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে গোপনে রংপুরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান রাতেই। মুরুলী চন্দ্র বর্মণের রংপুরে মৃত্যু হলে মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে কাকিনা-মহিপুর সড়কের সিরাজুল মার্কেটের সামনে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল মরদেহ হেফাজতে নেয়। পরে সুরতহাল প্রতিবেদনের জন্য মরদেহ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে আমার এ চন্দ্রপুর ইউনিয়নটি ভৌগোলিক দিক থেকে দুর্গম ও প্রায় ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। এখানে চোরাকারবারি চক্র খুবই সক্রিয় ও শক্তিশালী। বিষয়টি র্যাব ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন।’
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে নিহত ও আহতের ঘটনায় ভারতীয় ৭৫ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে বিএসএফকে এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও চোরাকারবারি চক্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গরু পাচারের কাজে জড়াচ্ছেন। কারণ গরু পারাপারে তারা অনেক টাকা পায়।
‘সে কারণে মূলত তারা সীমান্তে এসব চোরাকারবারি করছে। এ জন্য আমরা আরও কঠোর নজরদারি করছি।’
কালীগঞ্জ থানার ওসি ইমতিয়াজ কবীর বলেন, ‘গরু পাচারকারী সদস্যরা বিএসএফের গুলিতে আহত মুরুলীকে সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গোপনে রংপুর নিয়ে যায়। রংপুরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হলে বাড়ি ফেরার পথে এসআই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ মরদেহবাহী গাড়িটি কাকিনা-মহিপুর সড়কের সিরাজুল মার্কেট এলাকা থেকে হেফাজতে নিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ওই গাড়িতে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে কালীগঞ্জ থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিটন মিয়া ও মিজানুর রহমান আহত হওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। থানা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব আমরা।’
সপ্তাহের কম সময়ে লালমনিরহাট সীমান্তে ফের হত্যা
স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে লিটন মিয়া (২০) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হন। এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে বাহিনীটির গুলিতে নিহত হলেন মুরালী চন্দ্র রায়।
আগের ঘটনায় নিহত লিটন মিয়া আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী এলাকার মোকছেদুল ইসলামের ছেলে। তার মরদেহ গত বুধবার রাত একটার দিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।