গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু ও নারীসহ ১৬ জন নিহতের ঘটনার পর আবার ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
গভীর রাতে ঘটা ওই ভয়াবহ আগুনের হাত থেকে অর্ধশতাধিক মানুষ অল্পের জন্য প্রাণ রক্ষা করতে পারলেও তাদের সর্বস্ব পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ উত্তরপাড়া এলাকার ফুটবল খেলার মাঠের পাশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের বরাতে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ওই এলাকার জনি মিয়া ও সোহেল মিয়া নামে দুই ব্যক্তির নির্মিত দুটি কলোনি ভাড়া নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করে আসছিল। সেদিন প্রতিদিনের মতো তারা রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন।
রাত দেড়টার দিকে জনি মিয়ার ভাড়াটে শওকত হোসেনের ঝুটের গুদামে হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। মুহুর্তের মধ্যে আগুন পাশের জনি ও সোহেলের টিনশেড কলোনিতে ছড়িয়ে পড়লে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রচন্ড তাপে ঘুম থেকে জেগে উঠে আতকে ওঠেন কলোনির বাসিন্দারা। তাড়াহুড়া করে কোনো রকমে বাইরে বেরিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন তারা। পরে আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ও কোনাবাড়ি ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে যায় একটি ঝুটের গুদাম, দুই কলোনির ৩৮টি কক্ষ ও কক্ষের ভেতরে থাকা টাকা, টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল।
দুই কলোনির ৩৮টি কক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের সর্বস্ব পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। এখন তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রজত বিশ্বাস, পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল আলম তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে এক হাজার টাকা ও ৩টি করে কম্বল বিতরণ করা হয়।
কলোনি মালিক জনি মিয়া বলেন, ‘কলোনির বাইরেই ওই ঝুট গুদামের অবস্থান। এর আশপাশে প্রায়শই মাদকসেবীরা আড্ডা দেয়। হয়তো তাদের অবশিষ্ট সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে আগুনে পুড়ে আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী বলেন, ‘এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগুনের উৎস ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে।’
কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রাথমিকভাবে কিছু নগদ টাকা ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ঈদের আগে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’