বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিনামূল্যে ইফতারি খাওয়াচ্ছেন সনাতন ধর্মের সুজন প্রসাদ

সুজন প্রসাদ বলেন, ‘আমি যে ধর্মই পালন করি না কেন, দিন শেষে আমি একজন মানুষ। তাই মানুষ হিসেবে এ দেশের প্রতি, এ দেশের মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি রোজাদারদের জন্য এ ইফতারের আয়োজন করছি।’

গাইবান্ধার সনাতন ধর্মের একজন হোটেল ব্যবসায়ী সুজন প্রসাদ। চলমান পবিত্র রমজানে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত রোজাদারের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করে থাকেন তিনি।

যেখানে প্রতিদিন রিকশাচালক, ভ্যান চালক, ঠেলা ওয়ালা, ফুটপাতের দোকানি, পথচারী, স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় অর্ধশত মানুষ ইফতারে অংশ নেন।

রমজানে এমন মহানুভবতা দেখিয়ে যাচ্ছেন গাইবান্ধা জেলা শহরের হকার্স মার্কেটের ‘বাঙলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের’ মালিক হিন্দু ধর্মের সুজন প্রসাদ। রোজাদার ও স্থানীয়রা বলছেন, হিন্দু ধর্মের লোক হয়েও মুসলিম রোজাদারদের জন্য সুজন প্রসাদের বিনা মূল্যের এই ইফতার আয়োজন যেন এ শহরে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে প্রথম রমজান হতে রোজাদারদের জন্য ইফতারের এমন আয়োজন করছেন বলে জানান সুজন প্রসাদ। সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ মহতী কাজটি চালিয়ে যেতে যান তিনি।

গাইবান্ধা জেলা শহরের রেলগেটের দিক থেকে হকার্স মার্কেটের প্রথম গলিতেই সুজন প্রসাদের এই হোটেল।

সরেজমিনে পড়ন্ত বিকেলে হোটেলে গেলে দেখা যায়, মাগরিবের আজানের আগেই টেবিলের ওপরে প্লেটে প্লেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অন্তত ১৩ ধরনের থালা ভর্তি ইফতারি। ওইসব থালায় রয়েছে, ছোলা বুট, পেয়াজু, বেগুনের চপ, আলু মিশ্রিত ডিমের চপ, ঝুড়ি (চিনি ময়দায় তৈরি এক ধরনের খাবার) ও জিলাপি। এসবেই শেষ নয়- পুষ্টির চাহিদা জোগান দিতে ইফতারির প্লেটে যোগ করা হয়েছে, খেজুর, গাজর-শসা, কলা, তরমুজ, ও বেলের শরবত। এ ছাড়া একই প্লেটে রয়েছে বিরিয়ানিও।

আজানের ঠিক আগ মুহূর্তে দেখা যায়, একে একে বাঙলা হোটেলে ইফতার করতে আসছেন রোজাদার ব্যক্তিরা। ঠিক এমন সময় কর্ম ব্যস্ততাও বাড়ে হোটেলের মালিক সুজন প্রসাদসহ হোটেলের কর্মচারীদের, তবে হোটেলের কর্মচারীরা কেবল পানি দেয়া এবং অন্য কাজ করলেও ইফতার পরিবেশন করেন সুজন প্রসাদ নিজ হাতে।

এ হোটেলে হঠাৎ এবং প্রথমদিন ইফতারে আসা তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তার ইফতার শেষে দাম জানতে চেয়ে ইফতারির বিল দেয়ার চেষ্টা করতেও দেখা যায়। কিন্তু সুজন প্রসাদ তাদের হাসি মুখে বলেন, ‘এখানে ইফতারের কোনো টাকা নেয়া হয় না। প্রতিদিন এখানে এসে ইফতার করবেন। যদি পারেন দুই একজনকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন।’

এদিন ইফতারে অংশ নেয়া বোয়ালী ইউনিয়নের সাবুতখালীর ভ্যান চালক আব্দুস সবুর বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে দাদার হোটেলে বিনে টাকায় ইফতার করি, পেট ভরে গেছে। ইফতারে যত কিছু থাকে আমাদের মতো গরিবের এতকিছু জোগাড় করা সম্ভব নয়।’

গোবিন্দপুর এলাকার ওই বাজারের পান ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন পথচারী, রিকশাচালক, অটোরিকশা চালক, ভ্যানচালক, হোটেলের কাছাকাছি ফুটপাতের দোকানদার এবং এই বাজারের কিছু ব্যবসায়ী নিয়মিত ইফতারে অংশ নেয়। আমি প্রতিদিন এখানে ইফতার করে থাকি।’

প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন বলেন, ‘সুজন প্রসাদ একজন হিন্দু ধর্মের লোক। তার এমন ইফতার আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমার মনে হয় সুজন প্রসাদ একেবারেই অন্তর থেকে মানসম্মত এবং রুচিসম্মত এসব ইফতার আয়োজন করে থাকেন।’

গাইবান্ধার সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু ফোনে বলেন, ‘হিন্দু ধর্মীয় লোক হয়েও মুসলিম রোজাদারদের জন্য সুজন প্রসাদের এ ইফতার আয়োজন সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সুজন প্রসাদের এমন আয়োজনই প্রমাণ করে বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক দেশ।’

কথা হয় সুজন প্রসাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি যে ধর্মই পালন করিনা কেন, দিন শেষে আমি একজন মানুষ। তাই মানুষ হিসেবে এ দেশের প্রতি, এ দেশের মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি রোজাদারদের জন্য এ ইফতারের আয়োজন করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর