সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে এমভি আব্দুল্লাহ ও ২৩ নাবিক জিম্মি ঘটনার সুরাহা হয়নি দীর্ঘ ১৪ দিনেও। বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আলোচনায় দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
এদিকে জাহাজ ও এর নাবিকদের উদ্ধারে কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের বিপক্ষে জাহাজটির মালিক পক্ষ। জিম্মি নাবিকদের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে তারা আলোচনার মাধ্যমেই জিম্মি ঘটনার সমাধান চান তারা।
মালিক পক্ষ বলছে, জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। জিম্মি নাবিকরা সুস্থ ও ভালো আছেন। নাবিকদের পরিবারের সঙ্গেও তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের অদূরে নোঙর করে আছে ইইউর যুদ্ধজাহাজ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম-এর মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় সোমালীয় জলদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে জিম্মি করে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’দফা স্থান পরিবর্তন করে জাহাজটিকে সবশেষ সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূলের কাছে নোঙর করে রাখা হয়েছে।
৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।
এমভি আবদুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ৯ দিনের মাথায় ২০ মার্চ জলদস্যুরা ‘তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে’ জাহাজের মূল মালিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে তারা এখনও পর্যন্ত মুক্তিপণ চায়নি বলে জানিয়েছেন কেএসআরএম-এর মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে জলদস্যুরা। তারা এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের মুক্তিপণ চায়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে। এটি এমভি আব্দুল্লাহ নোঙর করে রাখা স্থানটির কাছাকাছিই অবস্থান করছে। অন্যদিকে নিজেদের ‘শক্ত’ অবস্থান জানান দিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে জলদস্যুরা।
এ ছাড়া জাহাজের পাশে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে দস্যুরা। ইইউ জাহাজের উপস্থিতিতে বন্দি ২৩ নাবিকের ওপর নজরদারিতে কড়াকড়িও আরোপ করছে সশস্ত্র জলদস্যুরা। ৩০ থেকে ৩৫ জন সশস্ত্র জলদস্যু জাহাজে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকছে। যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতির পর থেকে জলদস্যুরা নাবিকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। কেবিনে থাকতে দেয়া হচ্ছে না তাদের।
শুক্রবার এক নাবিক তার স্বজনকে ফোনে জানান, জাহাজে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সে জন্য পানি ব্যবহার নিয়ে তাদেরকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। একটি টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে সবাইকে। খাবার নিয়েও কষ্টে আছেন তারা।
অবশ্য কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের পক্ষে নয় মালিক পক্ষ। এ বিষয়ে জাহাজের মালিক ও সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট মহলে বার্তা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে নাবিকদের উদ্ধারে জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মালিক পক্ষ।
এ বিষয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে অক্ষত অবস্থায় নাবিকদের মুক্ত করা। এজন্য আমরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে জিম্মি জাহাজে সোমালি পুলিশ কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সসহ যেসব সামরিক অভিযানের কথা আসছে, সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। আমরা কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের পক্ষে নই। সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক মাধ্যমে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা সুস্থ ও ভালো আছেন। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি।’
কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।