ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ওপর তার নিজ বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জামালপুর গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তার উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র ও তার অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছেন এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।
পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকন হামলার কথা স্বীকার করলেও প্রাণনাশের হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম তার ওপর হামলার বর্ণনা দিয়ে ওই ঘটনার বিচার দাবি করেন। বিচার না পেলে তিনি আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরাতন বাড়িতে আমার জেঠা (বড় চাচা) সামশুল হকসহ ৭ পরিবারের বসবাস। জেঠা অনেক আগে থেকেই বাড়ির উঠানের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু বাকি ৫ পরিবার এর বিরোধিতা করে। কারণ এতে বাড়ির সৌন্দর্য নষ্ট হয়।
‘সেখানে আমাদের জায়গা থাকায় আমরাও সেই পাঁচ পরিবারের দাবিকে সমর্থন দেই। কিন্তু ১২ মার্চ জেঠা ২০-৩০ জন বহিরাগত নিয়ে এসে জোরপূর্বক কাঁটাতারের বেড়া দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৫ পরিবার ওইদিন বিকেলেই নিজেদের জায়গায় যেখান দিয়ে সবাই চলাচল করে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়ে দেয়। এ সময় তারা শর্ত দেয়, জেঠার লাগানো কাঁটাতারের বেড়া তুলে না ফেলা পর্যন্ত তারাও এই বেড়া তুলবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই ঘটনা সমাধানের জন্য আমাদের দুপক্ষকে ২১ মার্চ জোরারগঞ্জ থানায় ডাকা হয়। কিন্তু এর আগের দিন ২০ মার্চ আমাদের জেঠার পক্ষ হয়ে পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন এবং তার সঙ্গে ৪০-৫০ জন বহিরাগত আমাদের বাড়িতে আসে। এ সময় তারা আমাদের বলে, পাঁচ পরিবারের দেয়া কাঁটাতারের বেড়া তুলে নিলে জেঠার দেয়া বেড়াও তুলে ফেলা হবে।
‘কিন্তু পাঁচ পরিবারের দেয়া বেড়া তোলার পর যখনই জেঠার লাগানো কাঁটাতারের বেড়া তুলে ফেলতে বলা হয় তখন তারা সুর পাল্টে ফেলে এবং তার অনুসারীরা আমাদের গালাগাল করে। এর প্রতিবাদ করলে মেয়র আমাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় আমার পরিবারের সদস্যদেরও এলোপাতাড়ি মারধর করেন মেয়র ও তার সঙ্গের লোকজন।’
শিক্ষার্থী জানান, ওই পর্যায়ে পাঁচ পরিবারের সদস্যরা মেয়রকে বলেন- বেড়া দিয়েছি আমরা। আপনি তাদের গায়ে কেন হাত তুলছেন? এরপর তাদেরও ওরা মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমি নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের পদধারী হিসেবে পরিচয় দিলে মেয়র ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কটূক্তি করেন এবং আর আমাকে গ্রামে ঢুকতে নিষেধ করেন। এমনকি আমাকে এলাকায় দেখলে টুকরো টুকরো করে ফেলারও হুমকি দেন।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, ‘এরপর থেকে মেয়রের ভয়ে আমি আমার নিজ এলাকায় যেতে পারছি না। আমার আশঙ্কা এই সংবাদ সম্মেলনের খবর পাওয়ার পর মেয়র আমার পরিবারের ওপরও হামলা করতে পারে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
‘এই ঘটনায় মামলা করতে গেলে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রহণ করেনি। আমি চাই, এই ঘটনায় মামলা গ্রহণ করে সুষ্ঠু তদন্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হোক।’
অভিযোগের বিষয়ে পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন বলেন, ‘আরিফের বাবা মূলত সেখানে থাকা ছয় পরিবারকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। আমি গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেছি। এ সময় দুই পক্ষকে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় দিয়ে থামিয়ে দিয়েছি। কাউকে হত্যার হুমকি দেইনি।’
পৌরসভার মেয়র হয়ে গ্রামের সমস্যা কেন সমাধান করতে গেলেন- এমন প্রশ্নে মেয়র খোকন বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা ইউএনও আর থানায় অভিযোগ দিলে সেখান থেকে আমাকে গিয়ে সমাধান করে দিয়ে আসতে বলা হয়।’
তবে মিরসরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন ফোন রিসিভ না করায় তিনি মেয়রকে পাঠিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে জোরারগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘থানার পক্ষ থেকে এই ঘটনা সমাধান করার জন্য মেয়রকে কিছু বলা হয়নি।’
মামলা না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি মামলা নেয়ার মতো না। তাই আমরা শুধু জিডি নিয়েছি। আর যেটুকু ঘটনা ঘটেছে সেটা নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এদিকে মেয়র যে ছয় পরিবারকে উদ্ধার করার কথা বলছেন সেই ছয় পরিবারের এক পরিবার আনোয়ার হোসেনের। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম অন্যায়টা করেছে সামশুল (আরিফুর রহমানের জেঠা) হক। এরপর এটি তুলে ফেলার জন্য আমরা সবাই মিলে নতুন করে আরেকটা তারকাঁটার বেড়া লাগিয়েছি। আর এই সামশুল হকের পক্ষ হয়েই মেয়র এসেছেন। এসে সমস্যার সমাধান না করে বরং আরিফসহ এদের পরিবার আর আমাদের ওপর হাত তুলেছেন।’
বাকি চার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যের একটি ভিডিও নিউজবাংলার হাতে এসেছে। তারাও আরিফ হোসেনের পরিবারকে নির্দোষ দাবি করে আনোয়ার হোসেনের সুরেই কথা বলেন।
এসব বিষয় মেয়র রেজাউলকে অবগত করলে তিনি বলেন, ‘আপনার সাথে আমি এতো কথা বলতে পারব না।’