বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাওরের জমিতে গ্যাস, বিনা চাপে নলকূপে পানি

  • প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ   
  • ২৫ মার্চ, ২০২৪ ১৫:৪৩

বাপেক্স ভূতাত্ত্বিক বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জে এর আগেও গ্যাস উদগীরণ জনিত কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অফিশিয়ালি আমাদের জানালে আমরা বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

দুই বছর আগে সুনামগঞ্জের হাওরের দুর্গম এলাকায় একটি নলকূপ বসানোর সময় গ্যাস উদগীরণ হতে থাকলে নলকূপ কর্মীরা তড়িঘড়ি করে কাজ করে চলে যান। এরপর থেকে সার্বক্ষণিক বিনা চাপেই নলকূপ থেকে পানি পড়তে থাকে।

পূর্বে বসানো নলকূপের এক হাজার ফুটের মধ্যে সম্প্রতি একটি ডিপ নলকূপ বসানোর সময়ও একইভাবে গ্যাস উদগীরণ হতে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, দুইটি নলকূপ থেকেই গ্যাসের চাপে আপনা আপনি বের হচ্ছে পানি। এ নিয়ে এলাকায় সবার মাঝে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন মাটির নিচে প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের হালির হাওরের ঘটনা এটি। হাওরাঞ্চল নিয়ে কথায় আছে ‘বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও’। এ ছাড়া কোনোভাবেই হাওরের গভীরে যাওয়া যায় না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হালির হাওরের ভেতর শুকনো মৌসুমে জিরাতিরা (ছয় মাসের অস্থায়ী কাঁচা ঘর তৈরি করে হাওরে বসবাস) এসে বসবাস করেন। এই জিরাতিদের জন্যই দুই বছর আগে হাওরের গুদারকান্দায় সরকারি উদ্যোগে নলকূপ বসানো হয়। প্রায় ৩০০ ফুট বসানোর পরেই পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। কর্মীরা কোনোভাবে গ্যাস নির্গমন কমতেই পাইপ বসিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান।

সেই থেকে গ্যাসের চাপে ওই নলকূপ দিয়ে আপনা আপনি পানি উঠতে থাকে। এই পানিই পান করছেন জিরাতিসহ হাওরে কাজ করতে যাওয়া কৃষকরা।

উলুকান্দির কৃষক সুমন দাস বলেন, ‘নলকূপ এবং ডিপ নলকূপ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ে। এই পানি দিয়ে আমরা হাত মুখ ধুই, এই পানি আমরা খাই। পানিতে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। নিশ্চই এর নিচে গ্যাস আছে।’

উলুকান্দি গ্রামের লিটন দাস বলেন, ‘গুদারকান্দার নলকূপ থেকে দুই বছর হয় আপনা আপনি পানি বের হচ্ছে। এই নলকূপের মুখে কাপড় বেঁধে উপরের অংশে ম্যাচ দিয়ে টুকা দিলেই আগুন জ্বলে ওঠে। নলকূপের পানিই দুই বছর হয় পান করছে হাওরে কাজ করতে আসা জিরাতিসহ অন্য কৃষকেরা।

‘আরেকটি ডিপ নলকূপ ২০ থেকে ২৫ দিন আগে কাজ শুরু হয়েছিল। এটি দিয়েও গ্যাস নির্গত হতে থাকে। কেউ আগুন দিলে, এই ডিপ নলকূপেও আগুন জ্বলে ওঠে।’

উলুকান্দি গ্রামের কৃষক সুধাংশু দাস বলেন, ‘মনে হচ্ছে গ্যাসের চাপে মাটির নিচ থেকে নলকূপে পানি পড়ছে। এখানে যদি গ্যাস পাওয়া যায় তবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ হবে। এতে আমাদের যেমন লাভ হবে তেমনি দেশেরও লাভ হবে।’

একই গ্রামের কৃষক পরেশ দাস বলেন, ‘নলকূপের পাইপ ২০ থেকে ৩০ ফুট যাওয়ার পরই গ্যাস উঠতে থাকে। সার্বক্ষণিক নলকূপ দিয়ে পানি পড়ায় জমি সব সময় ভিজা থাকে এতে আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। নলকূপ কর্মীরা বলেছিল ধীরে ধীরে পানি পড়া কমে যাবে কিন্তু কোনো পরির্বতন হচ্ছে না।’

বাপেক্স ভূতাত্ত্বিক বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জে এর আগেও গ্যাস উদগীরণ জনিত কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অফিশিয়ালি আমাদের জানালে আমরা বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেব। গ্যাসের নমুনা এনে পরীক্ষা করে দেখতে হবে এটি খনির গ্যাস নাকি অন্যকিছু। দুর্ঘটনা এড়াতে এর পূর্বে জায়গাটি লাল কাপড় দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে হবে।’

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আমাদের কাছে দেয়ার জন্য।

‘প্রতিবেদনটি পেলে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে পাঠিয়ে সহযোগিতা চাইব। অনুসন্ধান করে তারাই বলতে পারবেন এখানে কতটুকু গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর