জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজত্ব ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন পরিবেশে বিজয়ের কথা বলা যায়নি; নিজের পরিচয় দিতে পারেননি বীর মুক্তিযোদ্ধা।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা দেশে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে, আমরা বিজয়ের কথা বলতে পারিনি। মু্ক্তিযোদ্ধা নিজের পরিচয় দিতে পারেনি। একদিকে খুনি, আরেক দিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজত্ব ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করায় অনেক কষ্ট করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। একটাই লক্ষ্য ছিল, বাবার কাছ থেকে তার স্বপ্ন জনতাম বলে সে আলোকে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা উল্লেখ করেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন জাতি, যে জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমৃদ্ধ ভূখণ্ড পাবে। এই ঘুণে ধরা সমাজ তিনি ঢেলে সাজাতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেই সময়ই আসল আঘাত। স্বপরিবারে তাকে জীবন দিতে হলো। দুর্ভাগ্য আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর অল্প সময় পেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। এটা এত সহজ ছিল না, কিন্তু জাতির পিতা শেখ মুজিবের মতো নেতৃত্ব ছিল বলে সম্ভব হয়েছে। তিনি মাত্র তিন বছরের মধ্যেই দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন।’
স্বাধীনতার পুরস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা স্বউদ্যোগে মানুষের কল্যাণ করে যাচ্ছেন, তাদের পুরস্কৃত করাই সব থেকে বড় কথা। এই পুরস্কার শুধু পুরস্কার নয়, আরও অনেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী হবে, সেটাই বড় কথা। যারা পুরস্কার পেয়েছেন আমি তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
‘আমরা দেশের বিভিন্ন স্তরে মানুষের কল্যাণে কাজ করা এমন আরও লোকদের বের করে পুরস্কৃত করতে চাই।’
দেশের অর্থনীতি নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনীতিতে আসে চরম ধাক্কা, যার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। আমরা এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলেছি।
‘আমাদের সরকারি কর্মকর্তা এবং দলীয় নেতাদের বলেছি, ইফতার পার্টি না করে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করতে। ইফতার পার্টি করে খাওয়া বড় কথা না, মানুষকে দেয়াই বড় কথা। আমরা সেটাই করছি।’
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন নিয়ে তার কন্যা বলেন, ‘জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করে আমরা আগাচ্ছি। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বাংলাদেশের সে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তনের। এখানে কেউ ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না। সবাই খাদ্য, চিকিৎসা পাবে, সেই ব্যবস্থা করছি।’
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান নির্বিচার হত্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার মাসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, গণহত্যায় জড়িতদের প্রতি ঘৃণা জানাই। আর যেন এ রকম না হয়। এখনও ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে। আমরা এটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি।
‘আমরা চাই এই গণহত্যা বন্ধ হোক। আমরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিচারপতি, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী এবং দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।