বিগত পাঁচ বছর ধরে দুই শতাধিক মানুষের জন্য প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন হচ্ছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর জামে মসজিদে।
পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতি ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।
ব্যতিক্রমী এ ইফতার আয়োজনে রোজাদারদের মিলনমেলা দেখা যায়।
মসজিদটিতে রোজ ইফতারে অংশ নেন দাগারকুটি, বাবুরচর, চরগুজিমারী চর হাতিয়াসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল আর প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ।
এ আয়োজনকে দৃঢ় করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় দাতারা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও দূরদূরান্তের রোজাদারদের জন্য এমন উদ্যোগে খুশি অনেকেই।
আছরের নামাজের পর শুরু হয় ইফতারের প্রস্তুতি। মসজিদের মুসল্লি ও পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইফতারি তৈরিতে।
ইফতার করতে আসা একজন বলেন, ‘প্লাস্টিকের বড় বড় গামলায় ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। জায়নামাজে বসে সারিবদ্ধভাবে থাকা রোজাদারদের সামনে প্লেটে করে ইফতার,পানি পৌঁছে দিচ্ছেন সেচ্ছাসেবীরা। কলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, শরবত, আঙুর এবং খিচুড়িসহ নানা পদের খাবার।
‘সবাই ইফতার ও পানি নিয়ে আজানের অপেক্ষায়। আজান দিলে একসঙ্গে শুরু হয় ইফতার খাওয়া। এমন সুন্দর আয়োজন রমজান মাসজুড়ে থাকে।’
ইফতারি করতে আসা অনন্তপুরের ভিক্ষুক নুর আলী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন পুরাতন অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদে ইফতার করি। সারা দিন ভিক্ষা করে যে আয় হয়, তা থেকে কোনো রকমে সংসার চলে।
‘ইফতার কিনে কীভাবে খাব? তাই বিনা মূল্যে এখানে ইফতার করতে ছুটে আসি।’
হাতিয়া বাজার থেকে আসা রনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই এখানে ইফতার করতে আসি। আমি একা না; আমার মতো অনেক পথচারী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এবং আশপাশের ফুটপাতের দোকানদাররা এ মসজিদে ইফতার করতে আসেন। একসঙ্গে শতাধিক মুসল্লি ইফতার করার সুযোগ পাই।’
দাগারকুটি চর থেকে আসা বৃদ্ধ মোজাম্মেল বলেন, ‘হাতিয়া হাটে আসছি। শেষ বিকেলে হাট করে বাড়ি যেতে চরের মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। তাই এখানে ইফতার খেয়ে নামাজ আদায় করে হাটে খরচ করে বাড়ি ফিরে যেতে পারি।’
মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা মসজিদে সবাই মিলে ইফতার করে যে আনন্দ পাই, সেটা বাড়িতে একা হয় না। ছোট, বড়, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের নানা পেশার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করার আনন্দ অন্য রকম। আমরা চাই আমাদের পরের প্রজন্ম এ কার্যক্রম ধরে রাখুক।’
পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টো বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এমন আয়োজন করে আসছি। বাজারে অনেক অসহায়, দুস্থ মানুষজন থাকে। সামর্থ্য না থাকায় বাইরে ইফতার করতে ইতস্তত বোধ করেন।
‘আমরা মূলত আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সবার সহযোগিতায় প্রতি বছর রমজান মাস ধরে ইফতারের আয়োজন করে থাকি। এটি দেখে পরের প্রজন্ম যেন এ ইফতার আয়োজনটি ধরে রাখে, এই প্রত্যাশা আমাদের।’
হাতিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙন আর চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ হাতিয়া হাটে আসেন, কিন্তু রমজান মাসে তারা রোজা রেখে হাট করে বাড়ি ফিরে যেতে রাস্তার মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। আবার অনেকের দোকানের ইফতার কিনে খাবার সামর্থ্য থাকে না।
‘এসব চিন্তা করে পাঁচ বছর ধরে মসজিদে বিনা মূল্যে ইফতারের আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন একসঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ মুসল্লি ইফতার করেন। এটি যেন আগামীতে অব্যাহত রাখা হয়, সকলের সহযোগিতা চাই।’