বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাকা ছাড়া কাজ করেন না ভূমি কর্মকর্তা, অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের

ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘উপজেলা অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসগুলো কবরের পাশে করা উচিত। যাতে করে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নেয়া এবং সাধারণ মানুষদের হয়রানি করার আগে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে পারে।’

জমি খারিজ করে দেয়ার কথা বলে এক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নিচ্ছেন পাঁচ হাজার টাকা। আর যিনি টাকা নিচ্ছেন তিনি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর-পাটিচরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী। সম্প্রতি এমন লেনদেনের কিছু ছবি ধারণ করেছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।

শুধু এই একটি অভিযোগই নয়, এ ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অঢেল ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ।

সেবাপ্রার্থীরা জানান, গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই ভূমি অফিসে তার আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। চাহিদামতো ঘুষ না দিলে মেলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। আবার কেউ টাকা দিতে না চাইলে নানা শুরু করেন তালবাহনা। সেবা গ্রহীতাদের ভূমি অফিসের বারান্দায় ঘুরতে হয় দিনের পর দিন।

গোলাম কিবরিয়ার অফিশিয়াল কাজ নোটিশ জারি ও ভূমি জরিপ হলেও অনেক সেবাগ্রহীতারা বাধ্য হন তার মাধ্যমে খাজনা-খারিজসহ অন্যান্য কাজ করতে।

উপজেলার নেপালপুর গ্রামের কারিমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া আমার জমি খারিজ করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়। তারপর দিনের পর দিন আমাকে ঘুরাতে থাকে। আমার জমি খারিজ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমাকেই গরম দেখায় ফোন বন্ধ করে রাখে। এভাবেই আমাকে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে।’

ভূমি অফিসে গিয়ে কথা হয় আব্দুল্লাহ প্রামাণিক নামের এক সেবাগ্রহীতার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি হোল্ডিং খুলতে। তার পর কিবরিয়া বলল, এখন হবে না পরে এসো। তার পর এখানে আরেক কর্মকর্তাকে বললাম, তিনিও কোনো কাজ করে দেয়নি। এ ভূমি অফিসে প্রতিটি কাজের জন্যই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কোনো সেবা মেলে না। নইলে ঘুরতে হবে দিন, মাস, এমনকি বছর।’

ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘উপজেলা অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসগুলো কবরের পাশে করা উচিত। যাতে করে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নেয়া এবং সাধারণ মানুষদের হয়রানি করার আগে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে পারে। যখন আমার মতো মুক্তিযোদ্ধার কাছেও ঘুষ দাবি ও হয়রানি করা হয়। তখন সাধারণ মানুষ তো আরও নিরুপায়।’

তিনি বলেন, প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সরেজমিনে খোঁজ নিতে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নাম প্রকাশে না শর্তে কথা হয় একাধিক প্রতিবেশীর সঙ্গে।

তারা বলেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর আগে চাকরিতে যোগদান করেন গোলাম কিবরিয়া। তার পর থেকেই নিজেকে প্রভাবশালী মনে করেন নিজেকে। প্রতিবেশী হওয়ার পরও তার কাছে সেবা নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না। প্রতিটি কাজেই ঘুষ নেন তিনি।

তারা আরও জানান, নিরুপায় হয়ে চাহিদামতো টাকা দিয়েই কাজ করে নিতে হয়। প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।

এ সময় স্থানীয়রা তাদের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।

অভিযোগের বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর বক্তব্য নিতে গেলে, ভূমি অফিসে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা নেই না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পপি খাতুন বলেন, ‘ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর