বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত সোমবার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৪ মার্চ, ২০২৪ ২২:৫২

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার করা হল আরও ৩ হাজার লোককে। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল।’

সোমবার ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ।

এটা ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না।’

অতীতে বাংলাদেশে গণহত্যার দিবসটি উপেক্ষিত হলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।

২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। এরপর থেকেই জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় দিনটি। এখন এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটি পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করবে। সরকারিভাবে সোমবার রাত ১১টায় সারা দেশে এক মিনিট প্রতীকী ‘ব্লাকআউট’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

১৯৬৯ ও ৭০-এ বাংলার জনগণের ‘সিভিল ও পলিটিক্যাল রাইটস’ আন্দোলনে পরাভূত পাকিস্তান গণহত্যাকে বেছে নেয় জবাব হিসেবে। এ কারণে পূর্বপরিকল্পিত ব্যাপক এক হত্যাযজ্ঞ বাস্তবায়নে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা নিরস্ত্র তথা ঘুমন্ত সাধারণের ওপর হামলা চালায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। লোক দেখানো বৈঠকের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তারা।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন এবং ১৫ মার্চ থেকে ৩৫ দফা নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ সারা বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। পূর্ব বাংলায় বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়লে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বার বার সমঝোতার প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে এদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অটল থাকেন। এ অবস্থায় ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে চালায় বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত।

ওই রাতে হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই আখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

২৫ মার্চ কালরাতের অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের ২ সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সেই আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ হয়।

রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দু’জন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন।

‘টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগুচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার করা হল আরও ৩ হাজার লোককে। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল।’

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়- ‘১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সোমবার বেলা ২টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ বিভাগের আরো খবর