গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শনিবার রাতে হঠাৎ দুই দফায় ঝড়ো হাওয়া ও ভয়াবহ শিলাবৃষ্টিতে রাতারাতি তছনছ হয়ে গেছে একাধিক গ্রাম। বসতঘর ও গবাদি পশুর ঘরের টিনের চাল ফুটো হওয়ায় বিপদগ্রস্থ ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ।
অপরদিকে আম ও লিচুর মুকুল, কাঁঠাল, মাঠের বোরো ধান, কলাবাগানসহ মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও কৃষকের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, শনিবার তারাবির নামাজ ও রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ। রাত পৌনে ১০টার দিকে শুরু হয় ঝড়ো হওয়া ও সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। আবারও রাত ১টার দিকে আঘাত হানে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি।
তারা জানান, শিলাবৃষ্টিপাতে পরিমাণ এত ভয়বহ ছিল যে, বসত-ঘরের টিনের চালা ফুটো হয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকছিল ছোট-বড় শিলা। এর সঙ্গে ছিল বৃষ্টির পানিও। এমন ঘটনায় আতকে ওঠেন তারা। মূহুর্তের মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বাড়িঘর; চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
এ সময় কেউ ঘরের খাট-চৌকি, আবার কেউ টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নেন।
শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে বৈদ্যুতিক লাইন, ঘরের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। বৈদ্যুতিক লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে এসব গ্রাম। ফলে বন্ধ রয়েছে রাইস মিল, মশলা গুড়া করার মেশিন, ফ্রিজ, অনেকের মোবাইল ফোনসহ যাবতীয় বিদ্যুৎচালিত ব্যবহার্য জিনিসপত্র। এ অবস্থায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীরা।
দুই দফায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে উপজেলার বহেড়াতলী, গাছবাড়ী, সোনাতলা, কাথাচুড়া, চা বাগান, ঠেঙ্গারবান্দ, বোয়ালী, বর্মণপাড়া, ফুলবাড়িয়া, পাবুরিয়াচালা, বড়ইবাড়ী, কুটামনি, ডাকুরাইল, কোন্দাঘাটা, পিপড়াসিট, গোলুয়া, ঢোলসমুদ্রসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে কৃষকদের অভিযোগ, ফসলি জমির এমন ক্ষতি হলেও কোনো খোঁজখবর নেননি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
ঠেঙ্গারবান্দ এলাকার সংবাদকর্মী ইমারত হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করে রাতে দুই দফায় ঝড় ও ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে আমার ৮০ হাত ঘরের টিনের চাল নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমার নয়, গ্রামের বিভিন্ন লোকের ঘরের চাল ফুটো হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ টিনের চাল বদলাতে হবে। টিন না বদলালে কেউ তাদের ঘরে বসবাস করতে পারবে না।’
এই শিলাবৃষ্টিতে ওই এলাকার মানুষের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিন মিয়া বলেন, ‘ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। মাটিতে শিলার স্তুপ জমে গিয়েছিল। এরকম শিলা বৃষ্টি এর আগে কখনও দেখি নাই।’
অপর ইউপি সদস্য মফিজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টিতে কিছু কিছু গ্রামে ঘরের টিনের চাল ঝাঝরা হয়ে গেছে। এছাড়া গ্রামের পর গ্রামের মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে মৎস্য খামারিরাও ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সুপাভাইজাররা জানিয়েছেন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সব গ্রামের কৃষকের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। চা বাগান গ্রামে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে তা ব্যাপক নয়।’