গত মৌসুমে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার মাদারীপুরে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। মাঠে মাঠে সরিষার ফুলের সমারোহ দেখে বাম্পার ফলনের আশা করলেও এবার আশানুরূপ ফলন পাননি কৃষক। এমনকি গতবারের তুলনায় এবার দামও কম পাচ্ছেন সরিষা চাষিরা। ফলে আগামীতে সরিষা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে জেলার কৃষক।
ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে মাদারীপুরে সরিষার আবাদ বেড়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত দুই মৌসুমের তুলনায় এবার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরপর দুবছর নিজের তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন জেলার কালকিনির বিদ্যাবাগীশ এলাকার চাষি আনোয়ার মোল্লা। তবে এবার রোপন মৌসুমে তিনবার বৃষ্টিতে বীজ নষ্ট হয়। এরপরও হলুদের আভরণে হাসি ছিল তার মুখে, কিন্তু গাছে ফলন কম হওয়ায় আগেভাগেই ক্ষেত পরিষ্কার করছেন পরিবার নিয়ে। ফলে এমন লোকসানে আগামীতে আর সরিষার দিকে ঝুঁকতে চান না তিনি।
তার মতো একাধিক সরিষা চাষি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই পরিমাণ জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৮ মণ। বাজারে দাম ভালো থাকলে প্রতি বিঘার সরিষা ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি সম্ভব। এতে খরচ বাদে ভালোই লাভ থাকে। কিন্তু এবার সরিষার ফলন ও দাম দুটোই কম থাকায় তেমন লাভবান হতে পারছেন না চাষিরা।
বিদ্যাবাগীশ গ্রামের কৃষক লিটন উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর সরিষার ফলন ও দাম ভালো ছিল। এ কারণে এবার সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। তবে এবার গতবারের মতো ফলন হয়নি; দামও কম। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি মণে অন্তত ৬ থেকে ৮ শ’ টাকা কমে সরিষা বিক্রি হচ্ছে।’
গত মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন কুনিয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর শরীফ। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।
এই কৃষক বলেন, ‘এবার ফলন কম হয়েছে। গত বছর বিঘায় ৭ মণ থেকে ৮ মণ ফলন হয়েছিল, কিন্তু এবার ৫ মণ থেকে ৭ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। গত বছর কাঁচা সরিষা ২ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আর শুকনো সরিষা বিক্রি করেছি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২ শ’ টাকায়, কিন্তু এবার দাম খুবই কম।’
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক দিগ্বিজয় হাজরা জানান, ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ১৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবার ২০২৩-২৪ মৌসুমে আবাদ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৮২ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চাষ বেড়েছে ১ হাজার ৩৯৭ হেক্টর বেশি। এবার সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৭৬ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, ‘এবার চাষিরা দেরি করে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। তাছাড়া আবহাওয়াও অনুকূলে না থাকায় এবার সরিষার উৎপাদন গতবারের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে।’
তবে প্রণোদনা দিয়ে চাষিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এ কর্মকর্তা।