বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চলে গেলেন টংক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং

  • প্রতিনিধি, নেত্রকোণা   
  • ২৩ মার্চ, ২০২৪ ১৭:১৮

ব্রিটিশবিরোধী ও টংক আন্দোলন তথা হাজং বিদ্রোহ ছাড়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধু, টংক আন্দোলন, বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি জুলুম, বৈষম্য, নিপীড়ন, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কালের সাক্ষী ছিলেন এই বিপ্লবী নারী।

নেত্রকোণার দুর্গাপুরে ব্রিটিশবিরোধী ও টংক আন্দোলন তথা হাজং বিদ্রোহের সংগ্রামী মুখপাত্র কমরেড কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন। ৯২ বছর বয়সে শনিবার দুপুরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় নিজ বাড়ি বহেড়াতলীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

কুমুদিনী হাজং নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামে পাহাড়ি অঞ্চলের এক টিলায় বসবাস করতেন।

হাজং বিদ্রোহ ছাড়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধু, টংক আন্দোলন, বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি জুলুম, বৈষম্য, নিপীড়ন, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কালের সাক্ষী ছিলেন কুমুদিনী হাজং।

টংক আন্দোলনকারীদের খোঁজ করার নামে আন্দোলনকারী কৃষক হাজং নেতা কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বর হাজংকে ঘরে না পেয়ে ব্রিটিশ পুলিশ নববধু কুমুদিনীকে জোর করে টেনেহিঁছড়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুর সেনাছাউনির দিকে।

খবর পেয়ে বহেরাতলী গ্রামের রাশিমনি হাজং সেদিন শতাধিক নারী-পুরুষ নিয়ে দেশীয় দা, ঝাড়ু, বল্লম, লাঠি, তীর ধনুকসহ সুমেশ্বরী নদীর তীরে কুমুদিনীকে ছেড়ে দিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

কিন্তু পুলিশ কোনো কথাই না শুনে টেনেহিঁচড়ে কুমুদিনীকে দুর্গাপুরের সেনাছাউনির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় রাশিমনি হাজং দা দিয়ে পুলিশদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। তার দায়ের কোপে একজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

অপরদিকে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রাশিমনি হাজং। আর সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজং সেই পুলিশকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। পরবর্তীতে পুলিশের গুলিতে ২২ জন হাজং কৃষক নারী-পুরুষ মারা যান। পরে পরস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ চলে যায়।

গ্রামবাসীর ওপর আবারও হামলা হতে পারে এই ভয়ে মরদেহগুলো সোমেশ্বরী নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। পরদিন ব্রিটিশ পুলিশ বহেরাতলী গ্রামে তাণ্ডব চালায় এবং পুরো গ্রাম তছনছ করে ফেলে।

কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী মারা যান ২০০০ সালে। কুমুদিনী হাজং টংক প্রথা বিরোধী যুদ্ধে পরাজিত হননি। পরাজিত হয়েছেন বার্ধক্যের কাছে। পরাজিত হয়েছেন নিজের জমি উদ্ধারের সংগ্রামে। তিনি দুর্গাপুরবাসীর কাছে গর্ব ও গৌরবের সংগ্রামী মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

কুমুদিনী হাজং বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মননা পেয়েছেন। তার মধ্যে ১৯৯৯ সালে তেভাগা কৃষক আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে পুরস্কার, ২০০৩ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ নির্বাচিত পুরস্কার, ২০০৫ সালে স্বদেশ চিন্তা সংঘ ড. আহম্মদ শরীফ স্মারক পুরস্কার, ২০০৭ সালে মনিসিংহ স্মৃতিপদক পুরস্কার, ২০১০ সালে সিধু কানহু ফুলমনি পদক, ২০১৪ সালে জলসিঁড়ি পদক, ২০১৮ সালে হাজং জাতীয় পুরস্কার, ২০২১ সালে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক সম্মাননা, ২০২২ সালে পথ পাঠাগার সম্মাননা অন্যতম।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এই নেত্রীর মৃত্যুতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. রকিবুল হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কমরেড দিবালোক সিংহ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচালক গীতি কবি সুজন হাজং, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব পরিবার, পথ পাঠাগার পরিবার, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন, সিপিবি নেত্রকোণা জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদন জানিয়েছেন।

এই বিপ্লবী নেত্রী মৃত্যুকালে তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রোববার সকালে স্থানীয় শশ্মানঘাটে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

এ বিভাগের আরো খবর