বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘কালো সোনা’য় ফরিদপুরের কৃষকদের দিনবদল

  • মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর   
  • ২৩ মার্চ, ২০২৪ ২২:১৮

ফলে গত বছরের চেয়ে কিছু বেশি জমিতে চাষ হলেও এবার উৎপাদন তুলনামূলক কম হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। এই সুযোগে ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি ও বাড়তি মূল্য গোনার আশঙ্কাও রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজের আমদানি ঠেকানো না গেলে বিপদে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরাও।

ফরিদপুরে ফসলি মাঠে ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও চাষে কৃষকের দিনবদল হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার তারা বিঘাপ্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাবেন বলে আশা করছেন।

প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করতে এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। সে হিসাবে জেলাজুড়ে চাষিদের সবমিলিয়ে এবার প্রায় কোটি টাকার মতো করে লাভ থাকবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক দম্পতি লাভলী আক্তার ও ইনতাজ মোল্লা। ১২ বছর আগে মাত্র দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেন এই দম্পতি। সেবার ভালো লাভ পেয়ে প্রতিবছর বাড়িয়ে চলেছেন আবাদি জমির পরিমাণ। এবছর ৪০ বিঘা জমিতে তারা পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন।

এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তাদের। তবে পেঁয়াজ বীজের কল্যাণে এই পরিবারটি এখন কোটিপতি। নিজস্ব জমিতে তাদের রয়েছে পাকা ইমারতের বাড়ি।

দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছেলে আর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া একটি মেয়ে নিয়ে এখন তাদের সুখের সংসার। প্রতিবছর তারা পেঁয়াজ উপার্জনের টাকায় নিজেদের সম্পত্তি বাড়াচ্ছেন, কিনছেন জায়গা-জমি।

কৃষক লাভলি আক্তার বলেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে দেখি শ্বশুর বাড়ির লোকেরা পেঁয়াজ বীজের চাষ করে। আমিও স্বামীকে সহায়তায় নামি। এতে প্রথম বছরেই ভালো আয় হয় আমাদের। এরপর আর থেমে থাকিনি আমরা।

‘আমি এই পেঁয়াজ বীজের টাকা দিয়েই ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়িতে বিল্ডিং তুলেছি। প্রতিবছরই নতুন জমি কিনেছি। একসময় আমাদের পক্ষে এসব সম্ভব ছিল না। তবে এখন তা আমাদের কাছে বাস্তব।’

পেঁয়াজ বীজ গাছের সাদা কদম তথা গোলাকারের বড় ফুল শুকিয়ে বের হয় কালো দানা। আকাশ ছোঁয়া বাজার দরের কারণে একে বলা হয় ‘কালো সোনা’। একটা সময় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর থাকলেও দিন দিন দেশে এই ‘কালো সোনা’র আবাদ বাড়ছে।

পেঁয়াজ চাষে দেশের মোট বীজ চাহিদার ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ফরিদপুরে। চলতি মৌসুমে যদিও প্রাকৃতিক পরাগায়নের অভাবে আবাদের তুলনায় পেঁয়াজ বীজের উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা, তারপরও এবার জেলার চাষিদের সবমিলিয়ে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন তিন শ’ কোটি টাকার বাজার ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় মোট এক হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। গত বছর যা ছিল এক হাজার ৮৬৭ হেক্টর। এসব জমি থেকে এবার প্রায় সাড়ে সাত টনের বেশি বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো লাভ পাওয়ার কারণেই এই ফসলের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।

এবার জেলাটিতে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলা সদরে, প্রায় ২০৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন কৃষকরা। এরপর ভাঙ্গায় ১৭৬, সদরপুরে ১৪৬, চরভদ্রাসনে ৬৮, মধুখালীতে ৬৮, বোয়ালমারীতে ৩৪, নগরকান্দায় ২৮, সালথায় ২২ ও আলফাডাঙ্গায় ৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে।

তবে এ বছর মৌমাছির অভাবে পেঁয়াজ ফুলে পরাগায়ণের মাত্রা কমেছে। নিরুপায় কৃষক নিজ হাতে এক ফুলের রেণুর সঙ্গে আরেক ফুলের রেণুর পরাগায়ণের পন্থাও বেছে নেন অনেক খেতে, কিন্তু এতে প্রাকৃতিক পরাগায়ণের মতো ভালো ফলন হয়নি।

ফলে গত বছরের চেয়ে কিছু বেশি জমিতে চাষ হলেও এবার উৎপাদন তুলনামূলক কম হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। এই সুযোগে ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি ও বাড়তি মূল্য গোনার আশঙ্কাও রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজের আমদানি ঠেকানো না গেলে বিপদে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরাও।

স্থানীয় এক কৃষকের ভাষ্য, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি করা হলে তা সার্বিকভাবে ক্ষতিই ডেকে আনবে। কারণ, ভারত থেকে আনা বীজ নিম্নমানের হয়, তাতে ভালো ফলন হয় না।’

পেঁয়াজ বীজ আবাদে ছোট্ট শিশু প্রতিপালনের মতোই যত্নশীল থাকতে হয়। কোনোরকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে খেতে বীজের আবাদ শুরু হয় যেখান থেকে ফলন পেতে লেগে যায় এপ্রিল-মে মাস। জমি থেকে তোলার পর এক বছর পর্যন্ত এই বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। পরবর্তী বছর কৃষকরা এই বীজ সংগ্রহ করে বপন করে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে জেলার কৃষকরা এবার সাড়ে সাত টন বীজ উৎপাদন করবে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা।’

তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর জেলার বীজ চাষিদের সমস্যা নিরসনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের সব ধরনের পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছে। এতে তারা এ সেক্টরে দিন দিন উন্নতি করতে পারছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর