ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে ইটভাটা মালিক সমিতির তদবিরে অবৈধ ইটভাটা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তাদের নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় মোট ১৮টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ৮ নম্বর চাঁদপুর ইউনিয়নে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫টি অবৈধ ইটভাটা।
সড়কের পাশে ফসলি জমি ঘেঁষে হরিণাকুন্ডু উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁর এমএসবি ব্রিকস, বাবুল হোসেন খানের আরএসবি ব্রিকস, আলমগীর হোসেনের আনিশা এন্ড তানিশা ব্রিকস, শিতেলী পাড়া হাকিমপুর এলাকায় মিলন এন্ড জান্নাত ব্রিকস, পারমথুরাপুর এলাকায় এজেবি ব্রিকস নামে ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স।
সরজমিনে এমএসবি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, আম, জাম, রেইনট্রি, কদম, কাঁঠাল, খেজুর, নারকেলসহ সবুজ বনায়ন ধ্বংস করে শত শত মন বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের কাঠ মজুদ করা হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে বাঁশের মোথা ও খেজুর গাছসহ অন্য জ্বালানি কাঠ। ফলে চুল্লি থেকে অনবরত বের হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া।
এ ছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে স্তূপ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।
তারা জানান, ক্ষেতের পাশে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় ধুলোবালিতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ইটভাটার নিজস্ব মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
এমএসবি ইটভাটার পাশে বসবাসরত আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ ইটভাটায় দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হচ্ছে চারপাশ। তার বৃদ্ধ মা শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেছেন।
আক্কাস আলী নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ইটভাটার ধুলোবালিতে ঘরবাড়িতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা জরুরি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরে দুই একবার পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে সামান্য কিছু জরিমানা করলেও সেগুলো পরবর্তীতে আবার চালু হয়ে যায়। আর হরিণাকুন্ডুতে যতগুলো অবৈধ ইটভাটা রয়েছে সবগুলোই বিভিন্নভাবে তদবির করে অনৈতিক উপায়ে পরিচালনা করছে অবৈধ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁ।
ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বিষয়ে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁ বলেন, ‘শুধু ঝিনাইদহে না সারা দেশেই অবৈধ উপায়ে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। আপনারা পারলে ইটভাটা বন্ধ করে দেন।’
স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় ওই ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’
অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান বলেন, ‘হরিণাকুন্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ভাটায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে। হরিণাকুন্ডু উপজেলায় মোট ১৮টি ইট ভাটা রয়েছে যাদের কারোরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।’
পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।