কুমিল্লার দুটি উপজেলায় বেগুন চাষ করে খরচই তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
বুড়িচং ও দেবিদ্বারের চাষিদের ভাষ্য, বাজারে যে পরিমাণ বেগুন নিয়ে যান, তা বিক্রি করে গাড়ি ভাড়াও জোগাড় করতে পারেন না। এমন বাস্তবতায় আগামী বছর আর চাষ করবেন না সবজিটি।
বুড়িচংয়ের মিথলমা এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৩৬ শতক জমিতে শিংনাথ বেগুন চাষ করি। গাছে ফলন ভালো হয়। ৩৬ শতক জমিতে বেগুন চাষ করতে আমার অন্তত দুই লাখ টাকা খরচ হয়।
‘ভালো ফলনে স্বপ্ন দেখেছি ভালো মুনাফার, তবে বাজারে দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে দাম পাচ্ছি না। আমরা নিমসারসহ বিভিন্ন বাজারে বেগুন পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারছি না।’
কৃষক মিজানুর বলেন, ‘এ সপ্তাহে ১০০ কেজি বেগুন নিয়ে বাজারে যাই। বহু অনুনয়-বিনয় করে পাঁচ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করি। ১০০ কেজি বেগুন ৫০০ টাকায় বিক্রি করি।
‘এ টাকায় কৃষি শ্রমিকের মজুরি, গাড়ি ভাড়া দিয়ে শেষ হয়েছে। বাজার থেকে ফেরার সময় নিজের পকেট থেকে আরও ২০০ টাকা খরচ করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি বেগুন চাষ করে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আগামীতে আর বেগুন চাষ করব না। পাশের বাড়ির আমার এক ভাই ২০০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছে।’
দেবিদ্বার উপজেলার ব্রাহ্মণখাড়া গ্রামের সায়েদ আলী বলেন, ‘৩৬ শতক জমিতে বেগুন চাষ করি। বাজারে নিয়ে গেলে চার থেকে পাঁচ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়। শ্রমিক, সার, বীজসহ যেসব খরচ হয়েছে, বেগুন বিক্রি করে তার অর্ধেক খরচও আসবে না।’
হতাশার একপর্যায়ে বেগুন ছিঁড়ে মাঠে ছুড়ে ফেলেন সায়েদ আলী।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় সরকার এখন কৃষি শেড তৈরি করছে, যেখানে কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন। এ কার্যক্রম যখন বাস্তবায়িত হবে, তখন কৃষকরা উপকৃত হবেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি, তারা যখন কৃষি পণ্য বিক্রয় করবেন তারা যেন তাদের মোবাইল ফোন নম্বরটাও দিয়ে দেন। এতে করে আমরা যখন অভিযান করব, তখন যেন কৃষকদের ফোন করে বিক্রয়কৃত ফসলের সঠিক দামটা জানতে পারি।’