নওগাঁ সদরের একটি বাসা থেকে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) এক কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শহরের রজাকপুর মধ্যপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় লিয়াকত আলীর বাসার দ্বিতীয় তলায় ফ্যানের সিলিংয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় সাবিনা ইয়াসমিনকে পায় পুলিশ।
সাবিনার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকবালু আমিনগন্জ এলাকায়।
তিনি সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের এনজিওর প্রধান কার্যালয়ের সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন।
নওগাঁ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান সাগর বলেন, ‘আমানতকারীদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের এনজিওর কারণে সে আত্মহত্যা করেছে অনেকে মনে করছে।’
মরদেহটির পরিচয় রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিশ্চিত করেন তার ভগ্নিপতি হোসেন আলী।
তিনি বলেন, ‘সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের এই সংস্থা বেশ কিছুদিন আগে শত শত মানুষের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। ফলে তাদের সকল শাখার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এদিকে যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই সুরমা মাল্টি পারপাসে চাকরি করেছে, তারা পড়ে যায় বিপদে। অনেকে সমিতির মালিকদের চাপে আমানত সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়।
‘সাবিনাও চাকরি করার সুবাদে এলাকার পরিচিতজনদের কাছ থেকে টাকা আমানত হিসেবে জমা রাখে এই সমিতিতে। হঠাৎ সমিতি উধাও হয়ে যাওয়ায় সে পড়ে যায় বিপদে। আমানতকারীর চাপ সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন, তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।’
বাড়িওয়ালা লিয়াকত আলী বলেন, ‘সাবিনা গত বছরের পহেলা মার্চ মাসে আমার বাসায় ভাড়া ওঠেন। তার স্বামী দেশের বাহিরে থাকেন। অফিস সংলগ্ন বাড়ি হওয়ায় দুই তালার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া নিয়ে একা থাকতেন সাবিনা।’
এর আগে গত ৮ মার্চ জেলার মান্দায় আমানতের টাকা ফেরত নেয়ার চাপে সিরাজুল ইসলাম বকুল নামে এক এনজিও কর্মকর্তা ইঁদুর মারার ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন বলে খবর পাওয়া যায়। তিনি সুরমা মাল্টিপারপাসের পলাশবাড়ী শাখায় ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন।
গত দুই সপ্তাহ আগে এ শাখা কার্যালয় তালাবদ্ধ করে আমানতকারীদের জমা করা অন্তত ছয় কোটি টাকা নিয়ে রাতারাতি উধাও হন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আমানতকারীদের চাপের মুখে শুক্রবার বিকেলে টাকা ফেরত দেয়ার দিন ধার্য ছিল।এতে দিশোহারা হয়ে পড়েন ৮৮ থেকে ৯০ জন আমানতকারী।
সংস্থায় জমা করা অন্তত ছয় কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় তারা। এ টাকা শুধু একটি শাখার।
এনজিওটির আরও কয়েকটি শাখা অফিস ছিল। বর্তমানে সবগুলোই বন্ধ রয়েছে।
নওগাঁ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল গফুর বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু দরজা-জানালা লাগানো ছিল, তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সে আত্মহত্যা করতে পারে।
‘তারপরও ময়নাতদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে এবং আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।’