বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করেই সেতু নির্মাণ, ভোগান্তিতে স্থানীয়রা

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২৪ ২০:৫১

বেইলি ব্রিজটি ভাঙার আগে বিকল্প যোগাযোগের ব্যবস্থা কেন করা হলো না- জানতে চাইলে একে অপরকে দুষছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এলজিইডি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের নওপাড়ায় পোড়াগঙ্গা খালের ওপর নির্মিত পুরাতন বেইলি ব্রিজ ভেঙে সড়ক ও নৌপথ বন্ধ করে চলছে নতুন কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কাজ। বিকল্প কোনো সংযোগ সড়ক বা অস্থায়ী সেতুর ব্যবস্থা না করেই ব্রিজটি ভেঙে ফেলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ আপামর স্থানীয় জনসাধারণ।

আলু উত্তোলন মৌসুম শুরু হওয়ায় স্থানীয় দুই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।

বেইলি ব্রিজটি ভাঙার আগে বিকল্প যোগাযোগের ব্যবস্থা কেন করা হলো না- জানতে চাইলে একে অপরকে দুষছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বিকল্প সড়ক না রাখার বিষয়ে এলজিইডিকে দায়ী করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এলজিইডির দাবি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পরামর্শেই বিকল্প সড়ক রাখা হয়নি। আবার এলজিইডির অভিযোগটি ‘মিথ্যা’ বলছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ৪ কোটি এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যায়ে নওপাড়া কুসুমপুর সড়কের পোড়াগঙ্গা খালের ওপর ৪৬ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ পায় নায়েব আলী কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

গত বছরের নভেম্বরে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ মাস দেরি করে চলতি মাসে শুরু হয়েছে প্রকল্পের কাজ, যা শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের মার্চ মাসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইস্পাতের তৈরি পুরাতন ইলি ব্রিজটি ভেঙে নতুন নির্মানাধীন সেতু এলাকায় খাল বন্ধ করে দড়ি টেনে পাইলিং বসানোর কাজ চলছে। সামান্য মাটি কেটে খালের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হলেও তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। খাল দিয়ে নৌকা বা ট্রলার চলাচলের স্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি নেই। মানুষের চলাচলের জন্য পাশে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় এবং নদীপথটিতেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভারি যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

বাঁশ দিয়ে নির্মিত অস্থায়ী সেতুটি দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারলেও পণ্য বা পণ্যবাহী যান চলাচলে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সড়কটি দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ থাকায় ২-৩ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কাজীরবাগ সড়ক হয়ে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে দুই উপজেলার অন্তত এক লাখ মানুষের।

সিরাজদিখানের কুসুমপুর, ইছাপুরা, খিলগাও ও পাশের উপজেলা শ্রীনগরের কুড়ারবাগ, পানিয়া তন্তুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বছর আলু উত্তোলন মৌসুমে ২ থেকে ৩ লাখ বস্তা আলু নওপাড়া এলাকার বিভিন্ন হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। খালের ওপর থাকা সংযোগ সেতুটি ভেঙে ফেলায় এসব এলাকার উত্তোলিত আলু পরিবহনে কৃষকের খরচ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনেও হচ্ছে ভোগান্তি।

স্থানীয় আলুচাষী আব্দুর রব বেপারী বলেন, ‘আগে যেখানে এক বস্তা আলু খেত থেকে নওপাড়ার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে পরিবহনে ৩০ টাকা লাগত, এখন সেখানে নওপাড়া-কুসুমপুর সড়কটি ব্যবহার করতে না পারায় বিকল্প পথ ঘুরে আসতে প্রতি বস্তায় ২০ টাকা খরচ বেড়েছে।’

আশপাশে আর কোনো হিমাগার না থাকায় কৃষককে বাধ্য হয়ে এই বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর খান বলেন, ‘ঢাকা থেকে বিভিন্ন পণ্য আনা-নেয়ার জন্য স্থানীয় দোকানদাররা এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। এখানে রড-সিমেন্ট, টিনসহ বিভিন্ন ভারী পণ্যের দোকান/প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সকলেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেতুর উত্তর প্রান্তের মালির অংক এলাকায় অনেক এলাকা ঘুরে পণ্য আনা-নেয়া করতে হচ্ছে।’

নওপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী গোকুল দত্ত ডেনিস বলেন, ‘দেশের ছোটখাটো যেকোনো সেতু নির্মাণের সময় বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে তারপর কাজ করা হয়, কিন্তু এ পথটিতে এত মানুষের চলাচল সত্ত্বেও কেন বিকল্প সড়ক রাখা হলো না, তা বোধগম্য নয়।’

খাল কেটে মাটি দিয়ে বাঁধায় খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহও ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

নওপাড়া কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক এনামুল কবির লিটন বলেন, ‘নওপাড়া বাজারের দক্ষিণ পাশের ১০-১৫টি এলাকা থেকে স্থানীয় কোল্ডস্টোরেজ গুলোতে আলুর মৌসুমে ২-৩ লাখ বস্তা আলু আসে। কিন্তু এবছর সড়কটি বন্ধ থাকায় আলু তেমন আসছে না। কৃষকরা বেশি টাকা খরচ করে দূরদুরান্তের কোল্ডস্টোরেজে আলু নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের পরিবহন খরচ বাড়ায় লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নায়েব আলী কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. ফয়সাল আহমেদ খান বলেন, ‘এলজিইডি থেকে আমাদের যে ডিজাইন সরবরাহ করা হয়েছে, সেখানে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা নেই।’

কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের অনুরোধ ও বেশ কিছু বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ নিয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই।’

এলজিইডির লৌহজং উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইয়াসিন আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পটি গ্রহণ করার সময় করা মিটিংয়ে আমরা বিকল্প সড়কের প্রস্তাবনা রেখেছিলাম। তবে স্থানীয় বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যানের আপত্তির কারণে বিকল্প সড়ক আর রাখা হয়নি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুর কাজ কীভাবে করবে না করবে সেটা এলজিইডির ব্যাপার। আমি এই সিদ্ধান্ত দেয়ার কেউ নই।

‘তাছাড়া আমি কোনো মিটিংয়ে এ কথা বলিনি। তারা কীসের ভিত্তিতে আমার কথা বললেন আমি জানি না। শুনেছি, তারাই বিকল্প সড়ক না করতে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এভাবে কাজটি শুরু করেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর