বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘চোরাই পণ্যবাহী’ গাড়ির কারণে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক এখন মরণফাঁদ

  • প্রতিবেদক, সিলেট   
  • ২০ মার্চ, ২০২৪ ২২:৫১

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট সীমান্ত দিয়ে সম্প্রতি চিনি চোরাচালান বেড়েছে। গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনি সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এছাড়া ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরুও এই সড়কপথে দেশের ভেতর ছড়িয়ে যায়।

সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক এখন যাত্রীসাধারণ ও চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম। ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে চলতি বছরের প্রথম আড়াই মাসে দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। চোরাই পণ্যবাহী গাড়ির বেপোরায়া গতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে মত স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট সীমান্ত দিয়ে সম্প্রতি চিনি চোরাচালান বেড়েছে। গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনি সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এছাড়া ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরুও এই সড়কপথে দেশের ভেতর ছড়িয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, পুলিশ ও চাঁদাবাজদের এড়াতে চোরাইপথে আসা চিনি ও গরুবাহী ট্রাক এই সড়কে বেপোরোয়া গতিতে চলাচল করে। বেপোরোয়া গতির কারণেই মূলত বেড়েছে দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে সবগুলো দুর্ঘটনাই ঘটেছে চিনি বা গরুবাহী ট্রাক, মিনি ট্রাক বা পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে যাত্রীবাহী গাড়ির সংঘর্ষে।

সোমবার দুপুরে এ মহাসড়কের জৈন্তাপুরে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর সামনে পিকআপ ভ্যান ও লেগুনার সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৬ জন। এরা সকলেই একই পরিবারের সদস্য। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির পাত্র সম্প্রদায়ের এ পরিবারটি একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লেগুনায় চড়ে যাচ্ছিলেন; পথিমধ্যে ঘটে যায় এ দুর্ঘটনা।

দুর্ঘটনার বিষয়ে পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদের (পাসকপ) সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের চোরাকারবারিরা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। চোরাই পণ্যবাহী গাড়ির কারণে এ সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।’

অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর বেপোরোয়া গতিকেই অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন তিনি।

সোমবারের দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুলে ট্রাকের ধাক্কায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি নিহত হন।

এর আগে, ৫ মার্চ সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি এলাকায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় দুই যুবক নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় আহত হন আরও চারজন।

এ বছরের ২০ জানুয়ারি সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের রাংপানি নামক স্থানে যাওয়া মাত্র ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেটকার আরোহী চার ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু হয়।

সে ঘটনায় নিহতরা ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা সদর (নিজপাট) ইউনিয়নের জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল সংলগ্ন তোয়াসি হাটির বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী ছাত্রলীগ নেতা নেহাল পাল, কমলা বাড়ির গ্রামের ২৪ বছর বয়সী জুবায়ের আহসান, বড় পুকুরপাড় পানিয়ারা হাটির ২২ বছর বয়সী মেহেদী হাসান তমাল ও জাঙ্গাল হাটির হারুনুর ২৩ বছর বয়সী আলী হোসেন সুমন।

এ ছাড়াও ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলায় চোরাই পণ্যবাহী ডিআই ট্রাকের ধাক্কায় পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় সাতজন আহত হন। পরদিন তামাবিল মহাসড়কের বাঘের সড়ক নামক স্থানে চোরাই চিনিবোঝাই ডিআই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে অবস্থিত এক দোকানে ঢুকে পড়ে।

ট্রাকচালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে মনে করেন জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদও।

তার বক্তব্য, ‘ট্রাকচালকদের বেপরোয়া গতি এবং ট্রাফিক সাইন না মানার কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। মূলত চোরাই পণ্যবাহী ট্রাক বেশি বেপোরোয়া গতিতে চলাচল করে। এছাড়া মহাসড়কের যত্রতত্র অটোরিকশা ও টমটমের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠাও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।’

এ মহাসড়কের বাসচালক কামাল আহমদ বলেন, ‘তামাবিল মহাসড়কে প্রাণহানি কমাতে ভারতীয় অবৈধ পণ্যবাহী ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’

দুর্ঘটনা এড়াতে বুধবার থেকে এই মহাসড়কে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ফিটনেস, চালকদের লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে চেকপোস্টে তদারকি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বেপরোয়া গতি নিরুৎসাহে সচেতনতামূলক দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।’

ওসি বলেন, ‘বর্তমানে তামাবিল মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙা ও খানাখন্দে ভরপুর। খানাখন্দ এড়াতে চালকরা বিপরীত পথে চলে আসায় দুর্ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

এই মহাসড়ক দিয়ে চোরাচালান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চোরাচালান বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। প্রতিদিনই চোরাই পণ্যবাহী পরিবহন আমরা আটক করছি। এছাড়া দুর্ঘটনা প্রতিরোধেও পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর