দেশে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে বাংলাদেশ বন জরিপ (বিএফআই) কার্যক্রম। এ জরিপে দেশের মোট বৃক্ষ ও বনের পরিধি, গাছের বৈচিত্র্য, পুনর্জন্মের অবস্থা, কার্বনের পরিমাণ ও বনের মাধ্যমে জীবিকার তথ্য উঠে আসবে।
এ ছাড়া প্রথমবার জরিপ করা তথ্যের সঙ্গে এ জরিপের ফলাফল তুলনা করা হবে। ফলে প্রতিনিয়ত কী পরিমাণ বনজ সম্পদ বৃদ্ধি বা হ্রাস পাচ্ছে তারও সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। যা টেকসই বন ব্যবস্থাপনায় নীতি গ্রহণের জন্য সহায়ক হবে।
সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের কালাবগি ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় মঙ্গলবার সকালে বনজ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকাতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী দ্বিতীয় বাংলাদেশ বন জরিপের উদ্বোধন করেছিলেন।
ওই দিন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দক্ষ বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গড়ে তুলতে এবং বনজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকার দ্বিতীয় বন জরিপ করছে।
জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বনাচ্ছাদন, জীববৈচিত্র্য পরিবর্তন, নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং জাতীয় কৌশল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ তথ্যভান্ডার টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং আন্তর্জাতিক ঘোষণার পাশাপাশি বনজ সম্পদের আরও ভালো ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতে সহায়ক হবে বলে অভিমত করেছিলেন তিনি।
বন বিভাগ জানায়, দেশব্যাপী বন জরিপ পরিচালনা করার জন্য পাঁচটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। যেগুলি হল, শাল, পাহাড়ি, সুন্দরবন, উপকূলীয় এবং গ্রামীণ বন। এ পাঁচটি জোনকে আবার এক হাজার ৮৫৮টি প্লটে ভাগ করে নেয়া হয়েছে।
শুরুতে সুন্দরবনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৩০ জন একটি প্রতিনিধি দল আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম চালাবে। এরপর অন্যান্য বনাঞ্চলে তারা জরিপ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা (ইউএসএআইডি) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর কারিগরি সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বন বিভাগ।
মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন উপ বন সংরক্ষক মো. জহির ইকবাল।
তিনি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু হল। পূর্বে পরিচালিত বন জরিপের সঙ্গে এবারের নতুন তথ্যের তুলনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। জরিপ শেষ হলে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’
জহির ইকবাল জানান, বিশ্ব ব্যাংকের ২৫ কোটি টাকা ঋণে এ দ্বিতীয় বন জরিপ করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম বন জরিপ করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে বন জরিপের ফলাফল
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ওই জরিপে দেশের ৫টি বনাঞ্চলের ১ হাজার ৮৫৮টি প্লটের মধ্যে ৩৯০টি বৃক্ষ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে ৯ শতাংশ বৃক্ষ ছিল বিদেশি প্রজাতির।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয়েছিল, সারা দেশে বন ও বনের বাইরে বৃক্ষ সম্পদের পরিমাণ ৩৮৪ মিলিয়ন ঘন মিটার। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ বন এলাকার বাইরে অবস্থিত। বনের বাইরে ৩৮৭ মিলিয়ন টন বায়োমাস রয়েছে।
এ ছাড়া দেশের মাটির ওপরের বৃক্ষ সম্পদ, মাটির নিচের বৃক্ষ সম্পদ এবং মাটির মধ্যে (৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত) সঞ্চিত কার্বনের পরিমাণ রয়েছে ১২৭৬ মিলিয়ন টন। যার মধ্যে শতকরা ২২ শতাংশ কার্বনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে। উল্লেখযোগ্য দুটি বনের মধ্যে, ১০ শতাংশ কার্বন রয়েছে পাহাড়ি বনে এবং সাড়ে ৫ শতাংশ রয়েছে সুন্দরবনে রয়েছে। বাকি কার্বন বন এলাকার বাইরে অবস্থিত।
ওই জরিপে বনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) ১ দশমিক ২৯ শতাংশ অবদান রাখে বন। ২০১৭-১৮ বছরের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বৃক্ষ সম্পদের অর্থনৈতিক মূল্য ছিল ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।