বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বৃক্ষনিধন

বন বিভাগের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু গাছ কাটার অনুমতি নেয়া হয়েছে, কিন্তু দস্তিদার দিঘির পাড়ের গাছ কাটার অনুমতি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নেয়নি।

সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকার ঐতিহ্যবাহী দস্তিদার দিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। দিঘির পাড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে গার্ডওয়াল ও ওয়াকওয়ে বা হাঁটার রাস্তা।

এ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কেটে ফেলা হয়েছে দিঘির পাড়ের বৃক্ষগুলো। গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতিও নেয়নি সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্বে থাকাকালে দস্তিদার দিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। দিঘিপাড়ের গাছ কাটার সিদ্ধান্তও হয় ওই সময়। তখন গাছগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়।

এ এলাকার কাউন্সিলর ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌন্দর্যবর্ধন কাজ শুরু হওয়ার আগে সিটি কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীকে নিয়ে বৈঠক করে। ওই সময় সৌন্দর্যবর্ধন কাজের সুবিধার্থে গাছ কাটার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে সিটি কর্তৃপক্ষ জানায়, গাছগুলো সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে কাটাতে হলে অনেক দেরি হবে।

তখন স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটিকে গাছগুলো কেটে ফেলার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা গাছ কাটার জন্য ১০টি গাছ চিহ্নিত করে দেন। সম্প্রতি পঞ্চায়েত কমিটি এ গাছগুলো কাটা শুরু করে।

বন বিভাগের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু গাছ কাটার অনুমতি নেয়া হয়েছে, কিন্তু দস্তিদার দিঘির পাড়ের গাছ কাটার অনুমতি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নেয়নি।

তিনি বলেন, ‘তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে এভাবে এলাকাবাসীকে দিয়ে গাছ কাটাতে পারেন না।’

সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এভাবে নির্বিচারে গাছ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীরা।

পরিবেশকর্মী শাহ সিকান্দর আহমেদ শাকির বলেন, দিঘি বা পুকুরের পাড় থাকবে মাটির। এখানে মাটি সারিয়ে ইটপাথরের ওয়াকওয়ে বানানো কখনোই যুক্তিসংগত কাজ নয়। সৌন্দর্যবর্ধন করতে চাইলে দিঘির পাড়ে মাটি রেখেই করা যায়, কিন্তু এ জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীলদের পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা।

সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বেসরকারি কোনো কর্তৃপক্ষকে গাছ কাটার দায়িত্ব দিতে পারে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বায়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, সিটি করপোরেশন বেসরকারিভাবে স্থানীয়দের গাছ কাটার দায়িত্ব দিতে পারে না। নেহায়েত গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ যদি জরুরি মনে করে তাহলে গাছ কাটবে।

তিনি বলেন, একটি দিঘি থাকলেই যে ওয়াকওয়ে করা লাগবে এমনও কোনো নিয়ম নেই বা এটার কোনো প্রয়োজনীয়তাও নেই। দিঘি একটি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রাকৃতিকভাবেই তার চারপাশের পরিবেশ মানুষের হাঁটা-চলার জন্য রাখা উচিত।

তিনি বলেন, ‘দিঘির পাড়ে ওয়াকওয়ে করাই হয় বাণিজ্যিক স্বার্থে। আমি মনে করি সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এভাবে প্রকৃতিকে নষ্ট করা সিটি করপোরেশনের ভুল সিদ্ধান্ত।’

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এ এলাকায় নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। সাবেক মেয়র ও সাবেক কাউন্সিলরের সময় এই প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়।’

গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পঞ্চায়েত আছে। যেহেতু গাছগুলো এলাকার। তাই সিটি করপোরেশন ৮ থেকে ১০টি গাছের তালিকা দিয়েছে পঞ্চায়েত কমিটিকে কাটার জন্য। তারা এই গাছ কাটার দায়িত্ব নিয়ে গাছ কাটাচ্ছেন, তবে আমরা গাছ কাটার এ দায় এড়াতে পারি না।’

এ বিষয়ে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো গাছ কাটার জন্য টেন্ডার হয়নি। আমরা আপাতত সব গাছ কাটা বন্ধ রেখেছি। খবর পেয়েছি দস্তিদার দিঘির গাছ কাটা হচ্ছে। তাই এ গাছ কাটাও এখন বন্ধ রেখেছি, তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন একটা গার্ডওয়াল লাগবে এর মাঝখানে গাছ পরেছে সেটাতো কাটতেই হবে।’

এ ক্ষেত্রে পরিষদ সঠিক নিয়ম মেনেই কাজ করবে বলে জানান মেয়র।

এ বিভাগের আরো খবর