বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অবন্তিকার আত্মহনন: জবি প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের লালকার্ড

  • প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১৯ মার্চ, ২০২৪ ১৮:৫৫

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, অবন্তিকার অভিযোগপত্রকে অবহেলা করেছেন সদ্য সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল। তিনি অবন্তিকার অভিযোগ আমলে নিলে আজ হয়তো ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হতো। এই শিক্ষককে তদন্তের আওতায় আনতে হবে।

শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহননের ঘটনায় চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলনে উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিদিনই বিভিন্ন ব্যানারে ধারাবাহিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লালকার্ড দেখিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে অনুষ্ঠিত আন্দোলন কর্মসূচি থেকে প্রশাসনকে এই লালকার্ড দেখানো হয়।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, অবন্তিকার অভিযোগপত্রকে অবহেলা করেছেন সদ্য সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল। তিনি অবন্তিকার অভিযোগ আমলে নিলে আজ হয়তো ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হতো। এই শিক্ষককে তদন্তের আওতায় আনতে হবে।

লালকার্ড প্রদর্শনীতে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাওসিফ বলেন, ‘এই প্রক্টর অফিসে কী না হয়েছে? আগের প্রক্টর মোস্তফা কামাল কি করেননি? রিকশাচালকের ওপরও অত্যাচার করা হয়েছে।

‘প্রক্টর অফিসের ভূমিকাটা যেখানে অভিভাবকের মতো হওয়ার কথা সেখানে হয়েছে পুরো উল্টো। এই কাঠামো আমরা ভেঙে দিতে চাই। আমরা প্রশাসন থেকে একটা শক্ত অঙ্গীকার চাই। সর্বোপরি অবন্তিকার আত্মহত্যায় প্ররোচনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলকে ঢালাওভাবে সাজাতে সাতদিনের আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তারা।

আইন বিভাগের শোকসভা

এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অবন্তিকার অকাল মৃত্যুতে আইন বিভাগের শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।

শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসভায় উপাচার্য বলেন, ‘অবন্তিকা একইসঙ্গে মেধাবী শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিপ্রেমী ও বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। তার অকাল মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের নাম সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসবে। অবন্তিকার মৃত্যুতে গঠিত তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজব্যবস্থার কারণেই নারী আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আজও নারীদের মানুষ না ভেবে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নারীদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

‘একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তার পরিবার ছেড়ে আসে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়কে তার অনেক দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের শিক্ষকদের এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা।’

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন এবং চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে প্রতিটি বিভাগে যৌন নিপীড়ন অভিযোগ বাক্স বসানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধীন যা যা করা সম্ভব তা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নিপীড়ন সেল যথাসম্ভব কার্যকর করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিভাবক হওয়ার পর আমি নিজেও বুলিংয়ের শিকার হয়েছি। আমার নামে ফেসবুকে অনেক বাজে কথা লেখা হয়েছে। এসব এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘তবে আমাকে যে বুলিং করা হচ্ছে সেটা আমি নিতে শিখে গেছি। কেননা নারীদের নিয়ে কথা বলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক থাকার সময় থেকেই আমি বুলিংয়ের শিকার হয়ে আসছি। আজ আমি আর কারও কাছে মাফ চাইতে যাব না। আমি মাফ চাই আমার শিক্ষার্থীদের কাছে। আমার বিশ্বাস আমার শিক্ষার্থীরা আমাকে মাফ করবে।’

অনুষ্ঠানে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার বিভিন্ন বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো শিক্ষার্থী যেন মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যতনের শিকার না হন সে দাবি জানান তারা। তার স্মরণে বিভাগটি দু’দিন ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখে।

এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবন্তিকাকে আত্মহত্যার প্ররোচনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

এ সময় সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধের দায় কেবল নারী সংগঠন বা ছাত্র সমাজের নয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। মাত্র ৯ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত যৌন নিপীড়নের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বাকি ৯১ শতাংশ শিক্ষককে এসব শিক্ষকের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত রায়কে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে অনুমোদন দিতে হবে। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক ছত্রছায়া থেকে মুক্ত করে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা দিতে হবে। নারী নির্যাতনমুক্ত সমাজ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ করে গড়ে তুলতে হবে।’

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীর হার সমান থাকার পরও সেখানে ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতে থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষাঙ্গনে নিরাপদ পরিবেশ না থাকা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে এবং একইসঙ্গে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নেরও পরিপন্থী।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ লক্ষ্য করা যায় না বরং শিক্ষকদের মধ্যে দায়িত্ব পালনের চেয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ের তৎপরতা দেখা যায় যা প্রকৃত শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।’

উপস্থিত অন্যান্য বক্তা বলেন, নারীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে ঘটনা ঘটার আগেই পরিবার, শিক্ষকদের প্রতি সচেতন হওয়ার জন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। এছাড়াও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দূর করে অপরাধীদের দ্রুত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ অবন্তিকার আত্মহননের ঘটনায় প্ররোচনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন।

এ বিভাগের আরো খবর