বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘সরকার দাম কমিয়ে দিয়েছে, প্রভাব বাজারে পড়েনি’

  • প্রতিবেদক, রাজশাহী    
  • ১৭ মার্চ, ২০২৪ ১৩:১৭

রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আফরিন হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার দামের ঘোষণা দেয়া হয়। আমরাও জেনেছি আজ (শনিবার) এই দাম ব্যবসায়ীরা কার্যকর করেনি। আমরা এবং ভোক্তা অধিকার সোমবার থেকে যৌথভাবে মাঠে নামব এবং অবশ্যই সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করব।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সারা দেশে ২৯টি খাদ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিলেও এর প্রভাব দেখা যায়নি রাজশাহীর বাজারে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন,পাইকারি বাজারে দাম না কমায় কমে বিক্রি করতে পারছেন না তারা।

রাজশাহীর বাজার পরিদর্শনে জানা যায়, ছোলার দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৯৮ টাকা বেঁধে দিলেও শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীর বাজারে পণ্যটি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।

দুই ধরনের মসুর ডালের নির্ধারিত দাম ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা এবং ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু বাজারে মসুর ডাল প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

খুচরা বাজারে খেসারির ডালের সর্বোচ্চ দাম ৯৩ টাকা করা হলেও বাজারে মিলে ১৩০ টাকায়।

মাসকালাইয়ের দাম ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা এবং মুগডালের খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ দাম ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়, তবে বাজারে খেসারির ডাল ১৬০ টাকা ও মুগ দাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এ ছাড়া ছাগলের মাংসের দাম এক হাজার তিন টাকা করা হয়, তবে রাজশাহীর বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। খাসির মাংস বিক্রি হয় এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।

ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও রাজশাহীর বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগির কেজি ছিল ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা।

সরকার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে ৬৫ টাকা। এ ছাড়া রসুন ১২০ টাকা ও আদার দর ঠিক করা হয় ১৮০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের দর নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা কেজি।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্ধারিত দামের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি বাজারে।পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। আদা আগের দামেই ২০০ টাকা কেজি এবং রসুন বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজি দরে।

শুকনো মরিচের সর্বোচ্চ দাম ৩২৭ টাকা বলা হলেও রাজশাহীতে বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।

সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও শিম ৫০ টাকা এবং আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ২৪ টাকা বেঁধে দিয়েছে সরকার, তবে বাজারে এসব সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।

বাজারে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। বেগুন ও শিম বিক্রি হতে দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অন্যদিকে টমেটো ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে বাজারে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে রাজশাহী বাজারে ৩৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো খেজুর নাই। এ ছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে।

চিড়ার খুচরা দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। বেসনের কেজি ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, তবে নির্ধারিত দামে পণ্যগুলো বিক্রি হয়নি।

চিড়া বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর বেসন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

বিক্রেতারা অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম তুলে ধরে বলেন, বাজারে সরবরাহ বাড়লে পণ্যের দাম কমে এবং সরবরাহ ঘাটতি থাকলেই দাম বাড়ে। এতে তাদের করার কিছু নেই।

রাজশাহী সাহেব বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৭৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করি। আমরা সিটি হাটে গরু কিনি। গরু কিনতে যে টাকা লাগছে, সেইভাবেই আমরা বিক্রি করছি।

‘হাটে যা কিনছি, সেইভাবেই বিক্রি করছি। ১০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। এখানে গরুর দাম তো বাড়তি। আমরা করব কী?’

সাহেব বাজরের মুরগি বিক্রেতা জনি হোসেন বলেন, ‘আমাদের তো কেনার পরে বেচাকেনা। আমরা তো কমাতে পারছি না। আমরা বেশি দামে কিনছি। সেভাবেই বিক্রি করছি।

‘আমাদের এক কেজি মাল বেচে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। এখন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করে আমাদের ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হবে।’

সবজি বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে দামে কিনছি, সেই অনুপাতেই বিক্রি করছি।’

ক্রেতাদের ভাষ্য, সব পণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকার দাম কমালে বাজারে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে, কিন্তু বাড়ালে রাতারাতি বেড়ে যায়। প্রয়োজন সরকারের কঠোর নজরদারি।

রাজশাহী মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে আসা মাসুদ রানা বলেন, ‘সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি, তবে দাম বাড়ালে সেটি অবশ্যই এতক্ষণ কার্যকর হয়ে যেত। আমরা সাধারণ মানুষ, সাধারণ ইনকাম করি। দাম নিয়ে আমরা তো হিমশিম খাচ্ছি।’

বাজারে মুরগি কিনতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের কোনো প্রভাব পড়েনি দাম কমার, তবে সরকার যদি এই বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই এগুলোর দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। এ জন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।’

রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আফরিন হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার দামের ঘোষণা দেয়া হয়। আমরাও জেনেছি আজ (শনিবার) এই দাম ব্যবসায়ীরা কার্যকর করেনি।

‘আমরা এবং ভোক্তা অধিকার সোমবার থেকে যৌথভাবে মাঠে নামব এবং অবশ্যই সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করব।’

এ বিভাগের আরো খবর