বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জবি ছাত্রীর মৃত্যু: অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বহিষ্কার, শিক্ষক বরখাস্ত

  • প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১৬ মার্চ, ২০২৪ ১১:৪৩

জবি উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ‘আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেয়া আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত আটকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

ফেসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাসের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনার তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার রাতে জরুরি বৈঠক শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

উপাচার্য বলেন, ‘আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেয়া আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত আটকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দ্রুত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’

জবি উপাচার্য জানান, তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ ও সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ। এ ছাড়াও কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস।

ফেসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া অবন্তিকাকে শুক্রবার রাতে মৃত ঘোষণা করেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মো. জুবায়ের।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার (অবন্তিকা) গলায় একটি দাগ দেখতে পাই। তার দেহ নিথর অবস্থায় ছিল।

‘আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সর্বশেষ শনিবার সকাল ৯টায় তার সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে অবন্তিকার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। উপাচার্য সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর পূ্র্বের ঘটনা নিয়ে নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেযার পর সে যদি আসত, তাহলে আমি ভিসি ম্যামের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম। বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।’

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

অবন্তিকার আত্মহত্যার খবরে শুক্রবার রাত একটার দিকে উপাচার্য ক্যাম্পাসে গেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন ড. সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ঘোষণা দেন।

ওই সময় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত কর্মদিবস সময় নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ১২ ঘণ্টায় মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানান। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক বন্ধ করে সেখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। উপাচার্যের আশ্বাসে রাত তিনটার পর তারা নতুন কর্মসূচি দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ যে শাস্তির বিধান রয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু প্রশাসনের গাফিলতির কারণে অভিযুক্তরা পার পেয়ে গেছেন। তাই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া সব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ ছাড়াও এ ঘটনায় প্রথমে গঠন করা তদন্ত কমিটির একজনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শনিবার বিকেল তিনটায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্তদের ভাষ্য

জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে উনার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করিনি। এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোনো জায়গাতেই কানেকটেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মেয়েটার সঙ্গে দেড় বছর আগে আমাদের কথা হয়েছে ছেলেটার বিষয় নিয়ে। আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’

এ বিভাগের আরো খবর