ঝিনাইদহ-১ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল হাই এমপি মারা গেছেন।
থাইল্যান্ডের বামরুনদগ্রাদ হাসপাতালে ব্যাংককের স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ৭৮ বছর বয়সী আবদুল হাইয়ের।
ওই দেশে অবস্থানরত তার ব্যক্তিগত সহকারী শহিদুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচনায় ছিলেন ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল হাই। ওই সময় নির্বাচনি আরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে দুইবার আদালতে মামলা করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আবদুল হাই এমপির জন্ম শৈলকূপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামে। বাবা ফয়জুদ্দিন মোল্লা ও মা ছকিরন নেছা দম্পতির তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। আবদুল হাইয়ের পরিবারে স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।
তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পাস করার পর ভর্তি হন বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিকের পর ঝিনাইদহ কেশবচন্দ্র কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন বিএ।
বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। সেই থেকে তার জনপ্রিয়তা শুরু।
১৯৬৯ সালে সরকারি কেসি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঝাপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে তিনিই ঝিনাইদহে স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন।
দেশ স্বাধীনের পর তিনি ঝিনাইদহ যুবলীগের আহ্বায়ক ও ১৯৭৩ সালে যুবলীগের মহকুমা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে ১৯৮৭ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হাই। ১৯৯৮ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সেই নির্বাচনে সারা দেশে মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসন ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের শৈলকূপা আসন।
স্বাধীনতার টানা ৩০ বছর পর তিনি বিএনপির হাত থেকে শৈলকূপা আসনটি উদ্ধার করে আওয়ামী লীগের দখলে নেন। তিনি ২০০১ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।
২০০৫ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আবদুল হাই এমপি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের কাউন্সিলে দ্বিতীয় বারের মতো ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি।
আবদুল হাইয়ের জানাজা ও দাফনের বিষয়টি তার পরিবার থেকে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।