ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’কে অনুসরণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের (ইইউএনএভিএফওআর) দুটি জাহাজ। তাদের এ উদ্ধার কার্যক্রমটির নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন আটলান্টা’।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাহাজ দুটি জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। কারণ ওই সময় জলদস্যুরা নাবিকদের গুলি করে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল, তবে ২০ কিলোমিটার দূর থেকে শুক্রবার ‘অপারেশন আটলান্টা’ জিম্মি জাহাজটিকে অনুসরণ করছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স।
জলদস্যুরা সোমালিয়ার হাবিয়ো বন্দরে নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহকে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার আগে জাহাজটিকে বন্দরে নোঙর করে তারা। জাহাজটি শুক্রবার একই স্থানে নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে। এটি জলদস্যু নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থান করছে।
তবে এখনও পর্যন্ত দস্যুদের কেউ জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাদের কোনো দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানা যায়নি।
জাহাজ মালিক কেএসআরএম এর একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
এ ছাড়াও জিম্মি নাবিকরা সুস্থ ও ভালো আছেন বলে তথ্য দিয়েছেন এক নাবিক।
সূত্র জানায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ খান তার পরিবারের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন তিনি।
ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ যা জানালেন তার অডিও বার্তায়
তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো আছি, সুস্থ আছি। কিন্তু মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত। এখন আমরা সবাই জাহাজের ব্রিজে ঘুমাই। এরকম তো আমাদের অভ্যাস নেই। তারপরও ঘুমাচ্ছি। একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করি সবাই। গতকাল (বুধবার) একটা নেভি জাহাজ আসছিল। এরপর আজও (বৃহস্পতিবার) একটা নেভি জাহাজ আসে।
‘টোটাল দুটি জাহাজ আমাদেরকে রেসকিউ (উদ্ধার) করতে চেয়েছিল। তখন জলদস্যুরা আমাদের জিম্মি করে রাখে। মাথায় পিস্তল ধরে রাখে।’
ক্যাপ্টেন বলেন, ‘তারা আমাদের এখনও পর্যন্ত আঘাত করেনি, তবে আমাদের দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রাখছে। আমরা সুস্থ আছি, এখনও খাওয়া-দাওয়া আছে।’
ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ আরও বলেন, ‘জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে। আমাদের পানি ব্যবহার করছে। আমাদের এ খাবার হয়ত ১০ থেকে ১৫ দিন যেতে পারে। এরপর আমাদের খাবার যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাব। পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পড়ে যাব। এটাই হলো আমাদের পরিস্থিতি।’
কবির গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান তার পরিবারের কাছে অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে সর্বশেষ পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। নাবিকরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।
তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের পক্ষ থেকে কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। আশা করি যোগাযোগ হয়ে যাবে। জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১০ সালেও আমাদের মালিকের আরও একটি জাহাজ একই জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়েছিল। ওই সময় ১০০ দিন পর জাহাজসহ সব নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও সব নাবিকদের সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা করছি।’
এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন গ্রুপের কমকর্তারা। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।