মৃত্যুর আগেই ঘরের ভেতর কবর তৈরি করে পাকা করেছেন পঞ্চগড়ের ভাজন আলী ও অবিরন নেছা দম্পতি। মৃত্যুর পর সেখানেই তাদের দাফন করার জন্য বলেছেন পরিবারের সদস্যদের।
দম্পতি জানান, পীরের নির্দেশে কবর তৈরির পাশাপাশি সেখানে সুসজ্জিত পাকা মাজার তৈরি করে রেখেছেন তারা। তাদের বসবাস কবর সংলগ্ন ঘরে। ১২ বছর ধরে তারা কবরের পাশের ঘরে বসবাস করছেন। এখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন মৃত্যুর।
ভাজন আলী পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের উত্তর ভাটিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ১০১ হলেও ভাজন আলীর দাবি, তার বয়স আরও বেশি। এবং তার স্ত্রী অবিরনের বয়স ৮০ বছর। শতবর্ষী বৃদ্ধ ভাজন আলীর তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।
ভাজন আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর আগে ময়মনসিংহ জেলার শম্ভুগঞ্জের ছাইফুদ্দীন এনায়েতপুরীর কাছে তিনি বাইয়াত (শপথ পাঠ বা আনুগত্যের চুক্তি) নিয়েছিলেন। পীরের আদেশেই তিনি মৃত্যুর আগে কবর নির্মাণ করেছেন।
ভাজন আলীর দাবি, তার বাবা ইমান আলী ফকির মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, বাবার কবরের সঙ্গেই যেন তার ও তার স্ত্রীর কবর হয়। সে হিসেবে তারা জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছেন আগে থেকেই। পরে শম্ভুগঞ্জের পীর সাহেবের নির্দেশে মৃত্যুর আগেই মাটি খনন করে কবর তৈরি করে রেখেছেন তারা।
ভাজন আলীর ছেলে আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার দাদার একমাত্র সন্তান ছিল আমার বাবা। তিনি আমার মা-বাবাকে বলে গেছেন যে, মৃত্যুর পরও তোমরা আমার সঙ্গে থাকিও। এজন্য আমার বাবা কবর দুইটা করে রাখছে। যাতে তাদের মৃত্যুর পর আমরা অন্যখানে কবর না দেই।’
ভাজন আলীর স্ত্রী অবিরন নেছা বলেন, ‘‘‘আমার শ্বশুর একদিন বললেন, ‘তুমিতো আমার মা হও, আমাকে বুকে নিয়ে থাকবা তুমি।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম কেমনে বাবা? এরপর তিনি বললেন, ‘আমার কবরের পাশে তোমার কবর হবে। আর তোমার কবরের পাশে আমার ছেলের কবর হবে।’ পরে আমরা শ্বশুরের কবরের পাশে আমাদের কবরও তৈরি করে রাখি।’’’
ভাজন আলী বলেন, ‘আমার বাবা মৃত্যুর আগে তার কবরের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছিলেন, আমরা সেখানেই তাকে কবরস্থ করেছি।’