চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক ফ্রিল্যান্সারের সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ডিবি ছয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘটনায় জড়িত এক পরিদর্শককে তলব করে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।
সিএমপির পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বৃহস্পতিবার এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) স্পিনা রানী প্রামাণিক।
বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বাবুল মিয়া, শাহ পরাণ, মইনুল হোসেন, কনস্টেবল জাহিদুর রহমান ও আবদুর রহমান। এছাড়া ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিনকে তলব করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, সাড়ে তিন কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ আসার পর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার।
নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে ইন্সপেক্টর (নি.) রুহুল আমিনকে ব্যাখ্যা তলব করা হোক এবং এসআই (নি.) মো. আলমগীর হোসেন, এএসআই (নি.) মো. বাবুল মিয়া, মো. শাহ পরাণ জান্নাত ও মইনুল হোসেন এবং কনস্টেবল মো. জাহিদুর রহমান ও আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা রুজু করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।
এর আগে আবু বকর সিদ্দিক নামে এক ফ্রিল্যান্সার অভিযোগ করেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি ও ফয়জুল নামে একজনকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার গুলবাগ আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের একটি দল। সেদিন রাতে নগরের মনসুরাবাদে ডিবি হেফাজতে ছিলেন তারা। পরদিন বিকেলে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) অধ্যাদেশে একটি নন-এফআইআর মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের জরিমানা করে মুক্তি দেয়।
মুক্তি পেয়ে আবু বকর অভিযোগ করেন, হেফাজতে থাকাকালে তার মুঠোফোন ব্যবহার করে দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্থানান্তর করেছে ডিবির ওই দলটি। এছাড়া তার বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট (ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময়) থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার (প্রায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা) স্থানান্তর করা হয়েছে।
আবু বকরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগে ৫ মার্চ ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ আট পুলিশ সদস্য ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী হুসনুম লুবাবা। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয়।