দেশের অন্যতম গুণী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ মারা গেছেন। বু্ধবার (১৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ছোট ভাই শিবলী মহম্মদ বলেন, ‘আজও তানপুরা নিয়ে বড় ভাই সংগীত চর্চা করেছেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করি।’
সাদি মহম্মদের পারিবারিক বন্ধু নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বলেন, ‘গত বছর ৮ জুলাই সাদী মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান তিনি। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে।
‘মা হারানোর বেদনা সম্ভবত সাদী মহম্মদ নিতে পারেননি। গেল কয়েকদিন ধরে অসুস্থও ছিলেন। চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি খানিকটা সুস্থ হয়েছিলেন। আজ (বুধবার) রোজা রেখেছিলেন। ইফতারও করেন। এরপরই আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
সাদী মোহাম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সাদী মহম্মদ। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানা গেছে, নানা কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই সংগীত তারকা।
সাদী মহম্মদ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিমউল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা।
একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান সলিমউল্লাহ। আর সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ।
সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।
সাদী মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ গত বছরের জুলাই মাসে মারা যান।