ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এম ভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। এটি খুবই ধীরগতিতে এগুচ্ছে। জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাজে থাকা এক নাবিকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য নিশ্চিত হয়েছে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। তবে জিম্মি করে রাখা নাবিকদের সঙ্গে বুধবার দুপুরের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে মালিক পক্ষ।
কেএসআরএম-এর মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজটি পুরোপুরি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে জাহাজটি। জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি ফিশিং ট্রলারে জ্বালানি তেল সরবরাহ করেছে এমভি আব্দুল্লাহ থেকে।
জাহাজটি বুধবার সকালে সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। ধীরে ধীরে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারা।
এদিকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে নাবিকদের একজন ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ তাদের অবস্থা জানিয়ে তার ভাতিজাকে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছেন।
মেসেজে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সোমালিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা আগামীকাল সেখানে পৌঁছাবো। যতটুক কথা হয়েছে, সেখানে আমাদের অপর একটি পার্টির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ায় নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা শুরু করে দস্যুরা।
দস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটি দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের। এটি একটি বাল্ক ক্যারিয়ার। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’।
কেএসআরএম জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে এটি পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাহাজের নাবিক আসিফুর রহমান ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আমরা আক্রমণের শিকার। আমরা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছি। আমাদের প্রার্থনায় রাখুন।’
কেএসআরএম এবং এর সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা এখনও জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মকর্তারা বুধবার সকালে কয়েকজন ক্রুর সঙ্গে শেষবারের মতো যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন এবং ক্রুরা নিরাপদ ও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।’
তিনি বলেন, ‘জলদস্যুরা যোগাযোগ না করা পর্যন্ত নাবিক বা জাহাজ উদ্ধারের জন্য আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। জাহাজ ছিনতাই করার পর জলদস্যুরা সাধারণত কোনো যোগাযোগ করার আগে বা মুক্তিপণ দাবি করার আগে নিরাপদ এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে।’
জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুরের মধুখালী থানার বাসিন্দা, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইলের নাগপুর উপজেলার বাসিন্দা।
এছাড়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেক্ট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহর বাড়ি ফেনীতে। ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানায়।
ক্রুদের মধ্যে মো. শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়, মো. আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়। সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি উপজেলায়। আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া, নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারাখন্দ ও আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়।